তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচন: ইস্তাম্বুলসহ বড় শহরগুলোতে জয়ের দাবি বিরোধীদের

তুরস্কে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বড় শহরগুলোতে জয়লাভের দাবি করার পর বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির সমর্থকদের আনন্দ–উল্লাস।ছবি: এপি

তুরস্কে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেশটির প্রধান বিরোধী দল সর্ববৃহৎ শহর ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারায় জয়ী হওয়ার দাবি করেছে। দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও তাঁর দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) জন্য এটিকে সবচেয়ে বড় পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার ইস্তাম্বুলে ৯৫ শতাংশ ব্যালটের গণনা শেষে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) মেয়র একরেম ইমামোগলু বলেন, তিনি এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির প্রার্থীকে ১০ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বারান্দা থেকে দেওয়া ভাষণে এরদোয়ান তাঁর দল দেশজুড়ে ‘প্রভাবশালী অবস্থান’ হারিয়েছে বলে স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে বলেন, তিনি আত্মমূল্যায়ন ও কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করবেন।

সাবেক ব্যবসায়ী ইমামোগলু গতকাল তাঁর হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেন, ‘যাঁরা জাতির বার্তা বোঝেন না, তাঁরা পরিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আজ রাতে ইস্তাম্বুলের ১৬ মিলিয়ন বাসিন্দা যাঁরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রেসিডেন্ট—উভয়ের প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন।’

আঙ্কারায় সিএইচপির মেয়র মানসুর ইয়াভাস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারানোর দাবি করে এই ফলাফলকে দেশের ‘শাসকদের জন্য এক স্পষ্ট বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।  

তুরস্কের তৃতীয় বড় শহর ইজমিরেও এগিয়ে ছিল সিএইচপি।

রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৩৬টিতে এগিয়ে ছিল সিএইচপি। এর অনেকগুলোই একে পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে শাস্তি দিতে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন বিস্ময়কর এ ফলাফল। এ নির্বাচন ‘ইমামোগলুর জন্য এক সন্ধিক্ষণ’।
সিনান উলগেন, ইস্তাম্বুলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডামের পরিচালক  

ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ উদ্‌যাপনে ইস্তাম্বুলে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো বিরোধীদলীয় সমর্থক। তাঁরা এ সময় টর্চ জ্বালান ও জাতীয় পতাকা নাড়েন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বারান্দা থেকে দেওয়া ভাষণে এরদোয়ান তাঁর দল দেশজুড়ে ‘প্রভাবশালী অবস্থান’ হারিয়েছে বলে স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে বলেন, তিনি আত্মমূল্যায়ন ও কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করবেন।

তুরস্কে ২০০২ সাল থেকে শাসনক্ষমতায় থাকা এই প্রেসিডেন্ট ভাষণে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুল শুধরে নেব ও ত্রুটি–বিচ্যুতির প্রতিকার করব।’

এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইমামোগলু ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে বিজয়ী হন। ওই সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পরাজয় ছিল প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও এক ধাক্কা। তিনি এ শহরেই জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। ১৯৯০–এর দশকে শহরটির মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন এরদোয়ান।

শহরাঞ্চলে একে পার্টির হারানো নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হওয়া প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জন্য গতকালের ভোটের ফলাফলকে এক নতুন আঘাত হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এদিন ৮১টি প্রদেশের মেয়র নির্বাচন ছাড়াও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ১০ লাখ।

দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে বিশ্লেষক ও বেসামরিক নাগরিকেরা আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রার পতনের মধ্যে এরদোয়ানের সমর্থন ও বিরোধীদের টিকে থাকার সক্ষমতা—উভয়েরই একটি পরিমাপক হিসেবে দেখছেন।

ইস্তাম্বুলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডামের পরিচালক সিনান উলগেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে শাস্তি দিতে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন বিস্ময়কর এ ফলাফল। এ নির্বাচনকে ‘ইমামোগলুর জন্য এক সন্ধিক্ষণ’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

সিনান উলগেন আরও বলেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমামোগলু বিরোধীদের সাধারণ প্রার্থী হয়ে উঠবেন।