রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বিজয় দিবসের ছুটির প্রাক্কালে গত রোববার রাতে দেশটিতে এ হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার ইউক্রেন এ তথ্য জানিয়েছে। মার্চে বিরতি দেওয়ার পর গত ১০ দিনের মধ্যে এ হামলাকে সবচেয়ে মারাত্মক বলছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
প্রতিবছর ৯ মে বিজয় দিবস উদ্যাপন করে ইউক্রেনসহ ইউরোপের অনেক দেশ। থাকে সরকারি ছুটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীর কাছে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের স্মরণে দিবসটি ঘটা করে উদ্যাপন করে রাশিয়াও। এবার এই দিবসের আগে ইউক্রেনজুড়ে হামলা জোরদার করেছে মস্কো।
গতকাল ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের পক্ষ থেকে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, দেশটির খারকিভ, খেরসন, মিকোলাইভ ও ওদেসা অঞ্চলে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের জনবহুল এলাকাগুলোয় ৬১টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছোড়া হয়েছে ৫২টি রকেট।
এ ছাড়া হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ইরানে তৈরি অন্তত ৩৫টি রুশ ড্রোন। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এসব ড্রোনের সব কটি ধ্বংস করেছে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
রাজধানী কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, রুশ হামলায় কিয়েভে জ্বালানি সংরক্ষণাগার, গাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, রুশ হামলায় কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী ওদেসায় একটি খাদ্যগুদামে আগুন লেগে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাতের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর আগে হামলায় পাঁচজন আহতের কথা বলা হয়েছিল।
কিয়েভ আরও বলেছে, পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর দখল করতে চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মস্কো। বিজয় দিবসের আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এ জয় উপহার দিতে চায় রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনজুড়ে হামলার সতর্কতা
রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই গতকাল সোমবার গোটা ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়। ইউক্রেনের সামরিক ব্লগাররা বলছেন, মস্কোর কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে একটি রুশ যুদ্ধবিমানের উড্ডয়নের পর এই সাইরেন বাজানোর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে রয়টার্স আলাদাভাবে বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি।
নাৎসিদের মতো রাশিয়াও হারবে
নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউরোপের বিজয় দিবস স্মরণে গতকাল সোমবার এক ভিডিও ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের মতো রুশ বাহিনীকেও পরাজিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়।
যুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আধুনিক রাশিয়ার ফিরিয়ে আনা সব পুরোনো অশুভ কর্মকাণ্ড নাৎসিবাদের মতোই পরাজিত হবে। ঠিক ওই সময় আমরা যেভাবে সম্মিলিতভাবে অশুভকে ধ্বংস করেছি, আমরা এখন সেই একই অশুভকে একসঙ্গে মিলে ধ্বংস করছি।’
কিয়েভ যাচ্ছেন লিয়েন
আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার বিজয় দিবস কুচকাওয়াজের দিনে কিয়েভ সফর করছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন। জেলেনস্কি বলেছেন, লিয়েনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন। এদিকে, এবার একদিন আগেই যুদ্ধকবলিত দেশটিতে লিয়েনের এই সফরের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সচরাচর করা হয় না।