যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর নতুন সদস্য ফিনল্যান্ড

ন্যাটোতে যোগদানের নথি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের (ডানে) হাতে তুলে দিচ্ছেন ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো (বাঁয়ে)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ
ছবি: এএফপি

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হলো ফিনল্যান্ড। শিগগিরই ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ফিনল্যান্ডের পতাকা উড়বে। আজ মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের হাতে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তোর ন্যাটোতে যোগদানের নথি তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এ জোটে যোগদানের চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি ধাক্কা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর আগে পুতিন একাধিকবার ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে এখন ন্যাটোর সীমান্ত দ্বিগুণ হয়ে গেল। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর গত বছরের মে মাসে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে আবেদন করে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ফিনল্যান্ডে কী ঘটছে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া। তিনি ন্যাটোর সম্প্রসারণকে রাশিয়ার নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও জাতীয় স্বার্থে আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেন।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এর আগে নিরপেক্ষ থাকার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরু হলে তারা ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। ন্যাটোর আর্টিকেল ফাইভ অনুচ্ছেদ অনুসারে, ন্যাটো সদস্যভুক্ত কোনো দেশের ওপর আক্রমণ পুরো ন্যাটোর ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর অর্থ ফিনল্যান্ডের ওপর যদি কোনো আঘাত আসে বা ফিনল্যান্ড যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব ন্যাটো দেশ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ফিনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ জনমত ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে ছিল।

আজ মঙ্গলবার ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো জোটে আসায় ফিনল্যান্ড এখন নিরাপদ এবং আরও শক্তিশালী হবে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের ন্যাটোর ওপর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল যাতে তাদের সীমান্তে ন্যাটোর সদস্যদেশ কম থাকে। ইউরোপে ন্যাটোর সদস্য যাতে না বাড়ে, সে লক্ষ্যও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এ পরিস্থিতি পুতিনকে ধন্যবাদ জানাতে প্রলুব্ধ করছে। কারণ, তিনি রুশ আগ্রাসন রুখতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রাখতে চেষ্টা করেছেন।

ফিনল্যান্ডের আবেদন গৃহীত হলেও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি আটকে গেছে। তুরস্ক ও হাঙ্গেরি এখনো সুইডেনের যোগদানের বিষয়ে সম্মতি দেয়নি। ন্যাটোর ৩০টি সদস্যদেশের অনুমতি সাপেক্ষে নতুন সদস্যকে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হয়।

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো বলেন, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক কাজ এখনো বাকি। কাজটা হলো, সুইডেনকে সদস্যপদ পেতে সাহায্য করা। ন্যাটো মহাসচিব বলেন, পরবর্তীকালে সুইডেন যাতে ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ন্যাটো সদস্যদের কাজ করতে হবে।

ন্যাটোতে যোগ দিতে হেলসিঙ্কির এক বছরের কম সময় লেগেছে। আজ মঙ্গলবার ন্যাটোর ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফিনল্যান্ডকে ৩১তম সদস্যপদ দেওয়ার ঘটনা ঘটল।
ন্যাটোর মার্কিন দূত জুলিয়ান স্মিথ বলেন, ‘ফিনল্যান্ড দারুণ মিত্র। দেশটির সক্ষমতাও ব্যাপক। এ ছাড়া এর নীতি ন্যাটোর সঙ্গে মেলে। আমরা ন্যাটোর টেবিলে আসতে তাদের বাধাহীন রূপান্তরের প্রত্যাশা করি।’

জুলিয়ান স্মিথ বলেন, তিনি আশা করছেন আগামী জুলাই মাসে লিথুয়ানিয়ায় পরবর্তী ন্যাটো সম্মেলনে সুইডেনের যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে।

এদিকে ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়া তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৌশলগতভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল। তবে তাদের রুশবিরোধী ইউক্রেনের মতো হেলসিঙ্কির সঙ্গে কখনো বিরোধ ছিল না।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শোইগু বলেন, তাদের স্বল্পপাল্লার ইসকান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণ অস্ত্রের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম। বেলারুশের কিছু যুদ্ধবিমানেও পারমাণবিক সক্ষমতা রয়েছে।

ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ বলেন, তিনি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ঘটনা দেখেননি। তাই ন্যাটোর কৌশল এখনই পরিবর্তন করা হবে না। ফিনল্যান্ডের সরকারের অনুমতি ছাড়া হেলসিঙ্কিতে ন্যাটো সেনা পাঠানো হবে না।
এ নিয়ে বাল্টিক সমুদ্র এলাকায় ন্যাটোর সদস্যদেশ হলো সাতটি। এতে ওই এলাকায় রাশিয়া আরও মিত্রশূন্য হয়ে পড়ল।

পেসকভ বিবিসিকে বলেন, ন্যাটো কীভাবে ফিনল্যান্ডের ভূমি ব্যবহার করে, তার ওপর নজর রাখবে মস্কো। সেখানে কী ধরনের অস্ত্র ও অবকাঠামো তৈরি হয়, তা–ও দেখা হবে। এর ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেবে রাশিয়া।