বিমানবন্দরের পর এবার ডেনমার্কের সামরিক ঘাঁটির ওপর ড্রোন
ডেনমার্কের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের ওপর ড্রোন ওড়ার ঘটনার পর এবার দেশটির বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার কাছে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। এ সপ্তাহের শুরুতে বিমানবন্দর এলাকায় ড্রোন ওড়ার কারণে বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়।
ডেনমার্কের অন্যান্য স্থানের মধ্যে কারুপ বিমানঘাঁটির ওপরে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে, যার ফলে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে সেখানকার আকাশসীমা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। জার্মানি, নরওয়ে ও লিথুয়ানিয়াতেও ড্রোন দেখার খবর পাওয়া গেছে।
ডেনমার্কে সন্দেহজনক ড্রোন ওড়ার সর্বশেষ ঘটনা এটি। ফলে দেশটি আকাশপথে হামলার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এর পেছনে রাশিয়া জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের এই ড্রোন অনুপ্রবেশকে ‘হাইব্রিড অ্যাটাক’ বা মিশ্র হামলা বলে মনে হচ্ছে। তবে তারা সতর্ক করে বলেছে, এর পেছনে মস্কোর হাত থাকার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাইমন স্কেলসজার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, গতকাল শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৮টার দিকে এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে ড্রোন উড়তে থাকে।
সাইমন বলেন, ড্রোনগুলো কোথা থেকে এসেছে, সে সম্পর্কে পুলিশ কোনো মন্তব্য করতে পারছে না। কারণ, সেগুলো গুলি করে নামানো হয়নি। তদন্তের জন্য পুলিশ ডেনমার্কের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে।
সাইমন আরও বলেন, যদিও ঘাঁটির ওপরের বেসামরিক আকাশসীমা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। তবে এতে কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ, সেই সময়ে ওই এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছিল না।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, রাতে একাধিক সামরিক স্থাপনার কাছে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। তবে কোন কোন স্থাপনা, তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি। এ বিষয়ে তারা আর কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে।
ডেনমার্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম অন্যান্য সামরিক স্থাপনাগুলোর নাম প্রকাশ করেনি।
কারুপ বিমানঘাঁটিতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ কাজ করেন। এখানে ডেনমার্কের সশস্ত্র বাহিনীর সব হেলিকপ্টার, আকাশসীমা নজরদারিব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা কমান্ডের কিছু অংশ রয়েছে।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মাত্র কয়েক দিন আগেই ডেনমার্কের বিভিন্ন বিমানবন্দরের আশপাশে ড্রোন উড়তে দেখার কারণে বিমানবন্দরগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। ওই বিমানবন্দরগুলোর কয়েকটিতে সামরিক স্থাপনাও রয়েছে।
গত বুধবার রাতে ড্রোনের কারণে আলবোর্গ এবং বিলুন্ড বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে আরও তিনটি ছোট বিমানবন্দরে ড্রোন দেখা গেলেও সেগুলো চালু রাখা সম্ভব হয়েছিল।
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল ডেনমার্কের সীমান্তবর্তী শ্লেসভিগ-হলস্টাইন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ড্রোন দেখার পর তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। কারুপ বিমানঘাঁটি ও বুধবারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দরগুলো এই অঞ্চলেই অবস্থিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ট বলেন, ড্রোনের হুমকি অনেক বেশি। জার্মানি আগামী মাসে ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে।
এদিকে নরওয়ের পুলিশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, তারা দেশের পশ্চিমে অরল্যান্ড বিমানঘাঁটিতে ড্রোন দেখার ঘটনা তদন্ত করছে, যেখানে তাদের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলো রাখা আছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, রাশিয়ার সঙ্গে স্থল সীমান্ত থাকা লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াস বিমানবন্দরেও গতকাল ড্রোন উড়তে দেখা গেছে।
ন্যাটোর আরেক সদস্য রোমানিয়াও জানিয়েছে, একটি রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। তবে রোমানিয়ার ঘটনা নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।