সির প্রস্তাবে পুতিনের সায়, জেলেনস্কি চান শান্তিপ্রক্রিয়ায় চীন থাকুক

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, চীনের দেওয়া শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের ভিত্তি হতে পারে। তবে পুতিন আরও বলেছেন, এ প্রস্তাব নিয়ে তখনই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, যখন ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

মস্কোয় স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ, শান্তিপ্রক্রিয়া, চীন-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন এই দুই নেতা।

অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও চান, চীন শান্তিপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হোক। মঙ্গলবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি চীনের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হতে পারে চীনের শান্তি প্রস্তাব। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন কিয়েভ ও পশ্চিমারা শান্তির জন্য প্রস্তুত থাকবে।
ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

এর আগে ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে গত মাসে ১২ দফার একটি প্রস্তাব পেশ করে চীন। এ শান্তি প্রস্তাবের মূল কথা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান।

তবে চীনের এ শান্তি প্রস্তাবে স্পষ্ট করে বলা নেই, রুশ বাহিনী ইউক্রেন ছেড়ে যাবে কি না। যদিও ইউক্রেন সরকার বরাবরই বলে আসছে, ‘দখলদার’ রুশ বাহিনীকে ইউক্রেন থেকে শর্তহীনভাবে বিদায় নিতে হবে। তা না হলে শান্তিপ্রক্রিয়া কঠিন হয়ে যাবে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামিয়ে দিয়ে রুশ বাহিনীর দেশে ফেরার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো চলছে দুই পক্ষের লড়াই। চলছে আকাশপথে হামলা।

রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার জানিয়েছে, কৃষ্ণসাগরে রুশ বহরে তিনটি ড্রোনের হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ক্রিমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি চালানে বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র রেলপথে কৃষ্ণসাগরের রুশ বহরে নেওয়া হচ্ছিল।

আমরা চাই চীন আলোচনাপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হোক এবং আমরা তাদের (চীনের) উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি।
ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

ওই দিনই (সোমবার) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘রুশ সেনারা ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার আগে একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়কে সমর্থন জোগাবে।’ যুদ্ধবিরতি নিয়ে ব্লিঙ্কেনের এমন মন্তব্য ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে পশ্চিমাদের প্রতি পুতিনের অভিযোগকে সমর্থন জোগায় বলে মনে করো হচ্ছে।

মস্কোয় চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন আরও বলেন, চীনা শান্তি প্রস্তাবের অনেকগুলো শর্ত গ্রহণ করার মতো। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হতে পারে এ প্রস্তাব। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন কিয়েভ ও পশ্চিমারা শান্তির জন্য প্রস্তুত থাকবে।

পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের এই ‘প্রস্তুত’ থাকার বিষয়টি রাশিয়া এখন পর্যন্ত দেখেনি।

এ সময় পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে সি চিন পিং বলেন, ‘ইউক্রেন ইস্যুতে তাঁর দেশ শান্তি ও আলোচনার পক্ষে রয়েছে এবং ইতিহাসের সঠিক পক্ষেই রয়েছে।’ এ সময় চীনের এ অবস্থানকে ‘নিরপেক্ষ’ বলেও দাবি করেন সি চিন পিং।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে হাত মেলাচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২১ মার্চ, মস্কোয়
ছবি: এএফপি

চীনা প্রেসিডেন্টের মস্কোর সফর ঘিরে পশ্চিমাদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের ভয়ের কারণ, চীন যদি রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়, তাহলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারে।

এ বিষয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা উদ্বেগের কারণ। তবে মস্কোকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করছে বেইজিং, এমন কোনো সুষ্পষ্ট প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি।’

আরও পড়ুন

তবে ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, চীনের কাছে রাশিয়া অস্ত্রসহায়তা চেয়ে অনুরোধ করেছে এবং রাশিয়ার অনুরোধ সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বেইজিং, এমন ইঙ্গিত মিলেছে। ন্যাটোপ্রধান এমন এক সময়ে এ মন্তব্য করলেন যখন মস্কোয় পুতিন ও সি চিন পিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ঐক্যের কথা বলেছেন।

শুধু তা–ই নয়, সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের দিকে অভিযোগের তির ছুড়েছেন পুতিন। পুতিনের মন্তব্য, যুক্তরাজ্য যদি ‘পারমাণবিক উপাদানসমৃদ্ধ’ অস্ত্র ইউক্রেনকে দেয়, তাহলে মস্কো চুপ থাকবে না। প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হবে।

এদিকে সি চিন পিং যখন মস্কো সফরে রয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠক-সংবাদ সম্মেলন করছেন, ঠিক তখন আকস্মিক সফরে কিয়েভে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। ভারত সফর শেষে টোকিও না ফিরে তিনি পোল্যান্ড হয়ে কিয়েভে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে গেলেন। সেই দিক দিয়েও কিশিদার আকস্মিক কিয়েভ সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, চলতি বছরের মে মাসে জাপানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ভাষণ দেবেন তিনি। ইউক্রেন সফরে এসে ফুমিও কিশিদা তাঁকে এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

কিয়েভে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি ইউক্রেনে টেকসই উপায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় যুক্ত হতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই চীন আলোচনাপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হোক এবং আমরা তাদের (চীনের) উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি।’

আরও পড়ুন

এর আগেও চীনা প্রেসিডেন্ট সিকে যুদ্ধ থামাতে প্রভাব খাটানোর অনুরোধ জানিয়েছে ইউক্রেন। মস্কো সফর শুরুর আগে সি চিন পিংয়ের উদ্দেশে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো বলেন, ‘আমরা আশা করি, মস্কোর ওপর বেইজিং তার প্রভাব খাটিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আগ্রাসন বন্ধ করবে।’

আরও পড়ুন