অভিবাসন আইন কঠোর করেছে গ্রিস, চলতি মাসে কিছু বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা
আবেদন বাতিল হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য শাস্তি কঠোর এবং তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করেছে গ্রিস। এ জন্য গত বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়েছে।
চলতি বছর দেশটিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন বৃদ্ধি পাওয়ার পর এই আইন করা হলো। এতে গ্রিসের অভিবাসনবিরোধী আইন আরও কঠোর হয়েছে। চলতি বছর দেশটির দক্ষিণ সীমান্তেই অধিকাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন।
সম্প্রতি শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে গ্রিস। চলতি মাসে বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে দেশটি।
২০১৫-১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশ করেছিলেন। যুদ্ধ ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে তাঁরা সেখানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ওই সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ গ্রিস হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছিল।
২০১৫-১৬ সালের পর গ্রিসে অভিবাসনপ্রত্যাশী আগমন কমে যায়। কিন্তু চলতি বছর লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত গ্রিসের ক্রিট ও গাভদোস দ্বীপ হয়ে ইউরোপে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে গ্রিস সরকার উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয়ের আবেদনপ্রক্রিয়া সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে।
বুধবার পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দৃষ্টিতে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত তৃতীয় দেশ থেকে ইউরোপের দক্ষিণতম প্রান্তে প্রবেশ করা নথিপত্রবিহীন অভিবাসীরা যদি আশ্রয়ের অধিকারী না হন, তাহলে তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। অথবা কমপক্ষে ২৪ মাস আটক রাখতে হবে এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সরকারের এই আইন অভিবাসনের বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিরিয়াকোসের প্রশাসন গ্রিসের উত্তর সীমান্তে বেড়া তৈরি করেছে এবং সমুদ্র টহল জোরদার করেছে, যাতে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সীমান্ত অতিক্রম করতে নিরুৎসাহিত হন।
অভিবাসনমন্ত্রী থানস প্লেভরিস গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বলেন, গ্রিসকে রক্ষা করতে চাওয়া গ্রিক নাগরিকদের অধিকার অভিবাসনের আবেদন বাতিল হওয়া এক ব্যক্তির অধিকারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিবাসনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তি গ্রিসে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।
গ্রিসের নতুন আইনের বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, এই আইন আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন আছে—এমন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শাস্তির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সংস্থাটির প্রস্তাব, দ্রুতগতির আশ্রয়প্রক্রিয়া চালু করা যেতে পারে, যা শরণার্থী ও অ-শরণার্থীদের দ্রুত শনাক্ত করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে তাঁদের যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
গ্রিস জানিয়েছে, জুলাই মাসে আশ্রয় আবেদন স্থগিত করার পর থেকে শত শত অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মিসরের কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত পাঠানোর জন্য ফ্লাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এথেন্সের বিরুদ্ধে সমুদ্র ও স্থলসীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে। এ বছর ইইউর সীমান্ত সংস্থা জানিয়েছে, তারা গ্রিসের সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১২টি ঘটনা পর্যালোচনা করছে।