সাইপ্রাসের সেই দাবানলের সূত্রপাত সিগারেটের আগুন থেকে, পুড়েছে ১০০ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল

একটি হেলিকপ্টার থেকে পানি ফেলে দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সাইপ্রাসের লিমাসলের সুনি এলাকায়, ২৪ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

সাইপ্রাসে গত জুলাই মাসের এক দাবানলে সাত শতাধিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে গেছে। মারা গেছেন দুজন। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ি সড়কের ধারে অসাবধানতাবশত ফেলে দেওয়া একটি সিগারেটের আগুন থেকে এ দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস ব্যুরো (এটিএফ) এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দাবানলের উৎসস্থল মালিয়া ও আর্সোস গ্রামের সংযোগ সড়কের ধারে মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বহু সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।

তদন্তকারীরা বলেছেন, সে সময়ের পরিবেশ ছিল আগুন লাগার জন্য অত্যন্ত অনুকূল। বাতাসের গতি, শুষ্ক আবহাওয়া ও উচ্চ তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সিগারেটসহ যেকোনো জ্বালানি উপকরণ থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, ভিডিও, ছবি ও সাইপ্রাস ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, প্রবল বাতাস ও কম আর্দ্রতা আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রায় ২৫০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও ১৪টি বিমান দুই দিন ধরে পাহাড়ি এলাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সে সময় সাইপ্রাসের সরকার জানিয়েছিল, প্রবল বাতাস, প্রচণ্ড গরম ও পরপর তিন শীত মৌসুমে স্বল্প বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট শুষ্ক আবহাওয়া দাবানলকে ভয়াবহ করে তুলেছিল।

দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিদেসের অনুরোধে এটিএফের একটি দল দ্বীপরাষ্ট্র এ দেশে গিয়ে ১০ দিনব্যাপী তদন্ত চালায়।

আগুন থেকে বাঁচতে গাড়িতে করে পালানোর চেষ্টার সময় এক বৃদ্ধ দম্পতি আগুনে পুড়ে মারা যান। এক পাহাড়ি সড়কের ধার থেকে তাঁদের গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির ঘাটতি চলতি বছর তুরস্ক, গ্রিস ও সাইপ্রাসে দাবানলকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন’ পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়, এখন পর্যন্ত ২০২৫ সাল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের বছর। আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর আগুনের তীব্রতা প্রায় ২২ শতাংশ বেশি ছিল। দাবানলের আগুনে এসব দেশে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৮০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং ১০ লাখ হেক্টর বনভূমি পুড়ে যায়।