আলোচনা ছাড়া সমাধান নেই

চীনের বিশেষ দূত লি হুই গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে কিয়েভ যান। তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবার সঙ্গে বৈঠক করেন। 

লি হুই

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে আলোচনা ছাড়া কোনো সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন চীনের বিশেষ দূত লি হুই। গতকাল বৃহস্পতিবার বেইজিং বলেছে, তাদের দূত যুদ্ধ বন্ধে কিয়েভ ও মস্কোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। 

রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র চীন। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার ঘটনায় চীনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়নি। তবে দেশটির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে যুদ্ধ বন্ধে সহায়তার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে ইউক্রেনে যান লি। সেখানে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবাসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে এটাই চীনের কোনো শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার প্রথম ইউক্রেন সফর।

বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের ইউরোএশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত লি বলেছেন, সব পক্ষকেই নিজ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। পারস্পরিক আস্থা তৈরি করতে হবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে, যাতে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনা শুরু করা যায়। 

বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে সংঘাত বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে কয়েক মাস ধরেই কাজ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ইউরোপ সফর করছেন লি। এ সফরে তিনি ইউক্রেনেও গেছেন। লি বলেছেন, কুলেবাসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি ইউক্রেনকে যথাসাধ্য সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

■ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর এটাই চীনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার প্রথম ইউক্রেন সফর।

■ বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে কিয়েভকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। 

গত মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত এপ্রিল মাসে সি চিন পিং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করেন। তাঁরা এক ঘণ্টা আলোচনা করেছিলেন।

ইউক্রেনে হামলার নিন্দা না জানানোয় ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রাখায় কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা অবশ্য সি চিন পিংয়ের সমালোচনা করেন। 

২৯টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি

এদিকে ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। তবে গতকাল রাশিয়ার ছোড়া ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২৯টি ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। গতকাল ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বুধবার রাতে রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য অঞ্চলকে নিশানা করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছুড়েছিল রাশিয়া।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, গত রাতে রুশ দখলদার বাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। স্থল, জল ও আকাশভিত্তিক মোট ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রাশিয়ার ছোড়া ২৯টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসে ইউক্রেনের রাজধানীকে নিশানা করে আকাশপথে ৯ দফা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। 

কিয়েভ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজধানীর দিকে ধেয়ে আসা সব রুশ ক্ষেপণাস্ত্রই আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে বলে তারা মনে করছে। তবে আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দুটি জেলায় পড়ে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

বাখমুতে এগিয়ে ইউক্রেনের বাহিনী

ইউক্রেনের বাখমুত অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাখমুতের কিছুটা অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের বাহিনী দাবি করেছিলে, বাখমুতের উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে হামলা করে রুশ বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে তারা। তবে ওই সময় রাশিয়া পিছু হটার কথা অস্বীকার করে।

রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে রেজিস্ট্রার গঠনের উদ্যোগ

ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মাশুল রাশিয়াকে দিতে হবে, এমন ভাবনা নিয়ে ‘কাউন্সিল অব ইউরোপ’ একটি রেজিস্ট্রার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিদেশে রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে পারেনি কাউন্সিল অব ইউরোপ। 

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলো সবার আগে যে জোট গঠন করেছিল, তার নাম ছিল ‘কাউন্সিল অব ইউরোপ’। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তখনো স্বপ্নের পর্যায়েও ছিল না। সেই পরিষদের সদস্যসংখ্যা এখন ৪৬। ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয় কাউন্সিল অব ইউরোপ থেকে। বেলারুশের সদস্যপদ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।