যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হলে চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানাবেন ইসরায়েলি চিত্রশিল্পী

ইসরায়েলের প্যাভিলিয়নের সামনে ইতালির সেনারা কড়া পাহারা দিচ্ছেনছবি: এএফপি

ইতালির ভেনিস শহরে আগামী শনিবার শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী ‘ভেনিস বাইএনিয়্যাল’। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এতে অংশ নিতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের চিত্রশিল্পী রুথ পাতিরও। তবে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যতক্ষণ না ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে বিরতির কোনো চুক্তি হয় এবং গাজা উপত্যকায় জিম্মি করে রাখা ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর চিত্র প্রদর্শনী তিনি উন্মুক্ত করবেন না।

রুথ পাতির বলেছেন, প্রদর্শনী আপাতত বন্ধ থাকবে। ইসরায়েলের প্যাভিলিয়নের জানালায় তাঁর স্বাক্ষর করা একটি বার্তা সাঁটিয়ে দেওয়া আছে। সেখানে লেখা রয়েছে, ইসরায়েলি প্যাভিলিয়নের চিত্রশিল্পী ও কিউরেটরেরা তখনই প্রদর্শনী খুলবেন, যখন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তি হবে।

পাতির তাঁর ওয়েবসাইটে বলেছেন, শিল্পী ও কিউরেটরদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, প্রদর্শনী থেকে তাঁরা নিজেদের সরিয়েও নেবেন না, আবার প্রদর্শনীও বাতিল করবেন না। তাঁরা ইসরায়েলের যারা জিম্মি হয়েছে, সেসব পরিবারের পাশাপাশি দেশটির বৃহৎ সম্প্রদায় পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছেন, তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই অবস্থান নিয়েছেন।

পাতির ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘আমাকে যদি এমন একটি উল্লেখযোগ্য মঞ্চ দেওয়া হয়, আমি এটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমি মনে করি, চিত্রশিল্পের যে সময়, তা হারিয়ে গেছে। তবে আমি বিশ্বাস করতে হবে, এটি ফিরে আসবে।’

পাতির বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী ও শিক্ষাবিদ। আমি সাংস্কৃতিক বর্জনের দৃঢ় আপত্তি জানাই। কিন্তু আমি মনে করি, এর কোনো সঠিক উত্তর নেই এবং আমার অবস্থান থেকে যা করতে পারি, আমি কেবল তা–ই করি। যাঁরা আর্তনাদ করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এখনই যুদ্ধবিরতি দরকার। বন্দিদশা থেকে লোকজনকে ফিরিয়ে আনুন।’

ইসরায়েল বলছে, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ১২৯ জন বন্দী। তাঁদের মধ্যে অবশ্য ৩৪ জন নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৮৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৫৭৫ ফিলিস্তিনি।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার কারণে উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার ৮০ শতাংশই উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন। মানবিক সহায়তা সরবরাহে ইসরায়েলের অব্যাহত বাধার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সহায়তা সংস্থাগুলো।

ভেনিসে আন্তর্জাতিক এই চিত্র প্রদর্শনীতে ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে হাজারো চিত্রশিল্পী, কিউরেটর ও সমালোচক খোলা চিঠিতে সই করেছেন। এমনকি তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করারও পরিকল্পনা করছেন।

চিত্রশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ দ্য আর্ট নট জেনোসাইড অ্যালায়েন্সও এই প্রদর্শনী থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, যে দেশ গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তারা শিল্পের প্রদর্শন করবে, তা ‘অগ্রহণযোগ্য’।

চিত্রপ্রদর্শনী মেলার ৬০তম সংস্করণে অবশ্য ইসরায়েলের অংশগ্রহণের পক্ষে ইতালির সংস্কৃতিমন্ত্রী। প্রদর্শনীর উদ্বোধনের আগে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নগুলো ঘুরিয়ে দেখানো হয়। তখন ইসরায়েলি প্যাভিলিয়নের সামনে কড়া নিরাপত্তা ছিল।

এই দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ঢুকে পড়া নতুন কিছু নয়। ইউক্রেনে ক্রেমলিনের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২২ সালে রাশিয়ার চিত্রশিল্পীরা এই মেলায় অংশগ্রহণ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তাঁরা এ বছরও অংশ নিচ্ছেন না।