নতুন সরকার গঠনের জন্য যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন লিজ ট্রাস। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে।
ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসকে নতুন সরকার গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন। মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে ট্রাসকে এই অনুমতি দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে রানির ৭০ বছরের রাজত্বকালে ১৬তম প্রধানমন্ত্রী হলেন ট্রাস।

বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রশাসন গড়তে বলেছেন রানি। রানির প্রস্তাব গ্রহণ করে ট্রাস তাঁর হাতে চুম্বন করেন। রানির সঙ্গে করমর্দনের একটি ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। রানির হাতে চুম্বন করা মানে তাঁর প্রস্তাবে রাজি রয়েছেন ট্রাস।

এর আগে পৃথকভাবে বরিস জনসন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে যান রানির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে রানির কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। বরিসের পদত্যাগের পর রানির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ট্রাস আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন। এর আগে ৪৭ বছর বয়সী ট্রাস দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দাম বেড়ে যাওয়া জ্বালানির ব্যয় কমানো।

শেষবার বালমোরালে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। তখন রানি ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে ছিলেন। সাধারণত বিদায়ী এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

যুক্তরাজ্যের জ্বালানিসংকট মোকাবিলায় নতুন সরকারকে সমর্থন দিতে তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টি সব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রাখবে।
বরিস জনসন, যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী

রানির সঙ্গে সাক্ষাতে যাওয়ার আগে লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তিনি লিজ ট্রাসকে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাজ্যের জ্বালানিসংকট মোকাবিলায় নতুন সরকারকে সমর্থন দিতে তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টি সব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রাখবে।

১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর স্ত্রী ক্যারি। গতকাল লন্ডনে।
ছবি : এএফপি

ব্রেক্সিট ও করোনা মহামারির বিপর্যয় সামলাতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়েছে বরিসকে। করোনা মহামারির সময় বেশ কিছু কেলেঙ্কারির কারণে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন বরিস। পদত্যাগপত্র জমা দিতে রানির কাছে যাওয়ার আগে ডাউনিং স্ট্রিটে সমর্থকেরা বরিসকে করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানান।

আরও পড়ুন

সরছেন বরিস, এরপর কী?

ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির (টরি) নেতৃত্বের দৌড়ে গত সোমবার সাবেক অর্থমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাককে হারিয়ে দলের নেতা হন ট্রাস। ট্রাসের পক্ষে ৮১ হাজার ৩২৬ জন টরি সদস্য আর সুনাকের পক্ষে ৬০ হাজার ৩৯৯ জন ভোট দেন। এর মাধ্যমে ট্রাসের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। ওই দিনই তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাতে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পান।

নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দাম বেড়ে যাওয়া জ্বালানির ব্যয় কমানো। সঙ্গে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙা করা। সোমবার জয়ী হওয়ার পরপরই লিজ ট্রাস সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রিটিশ নাগরিকদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। কর কমানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে ‘বলিষ্ঠ পরিকল্পনা’ রয়েছে বলে জানান তিনি। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আবার লেবার পার্টিকে হারিয়ে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাস।

আরও পড়ুন

লিজ ট্রাস আসতে না আসতেই পদত্যাগ দুই মন্ত্রীর

ট্রাস বরিসের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দলের নেতৃত্ব বরিস তাঁকে চেয়েছিলেন মনেপ্রাণে। ফলে ট্রাসের নতুন সরকারে বরিসের প্রভাব থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ট্রাস বিজয়ী হতে না হতেই বরিসের মন্ত্রিসভার দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ও সংস্কৃতিমন্ত্রী নাদিনে ডরিস।

দেশের পরিস্থিতি ও নতুন সরকার গঠন নিয়ে গতকাল ডাউনিং স্ট্রিটে লিসের ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ট্রাসের মন্ত্রিসভায় কারা থাকতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ট্রাসের মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, এমন ১০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্ক ফুলব্রুক, রুথ পোর্টার, অ্যাডাম জোনস, সাইমন ম্যাকগি, ডেভিড ক্যানজিনি, জেসই স্টেইন, সারাহ লুডলো, সোফি জার্ভিস, সেরিডান ওয়েস্টলেক, জেমস বোলার প্রমুখ। তবে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জেমস ক্লিভারলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কোয়াসি কোয়ার্টেং অর্থমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

আরও পড়ুন

অর্থনীতি বিপর্যয়ে রেখেই বিদায় নিচ্ছেন বরিস জনসন