মহাসাগরে যাত্রা শুরুর পথে দূরনিয়ন্ত্রিত রোবট জাহাজ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নৌযানফাইল ছবি

শুনতে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো। মহাসাগরে ছুটে চলেছে জাহাজ, তবে নেই কোনো আরোহী। ভবিষ্যতের এমন কাল্পনিক দৃশ্য দেখাটা মনে হয় এখন আর বেশি দূরে নয়। ভাবনায় আসা সময়ের আগেই দেখা যেতে পারে এ দৃশ্য।

পীতাভ–সবুজ রঙের বিশাল আকারের এই রোবট জাহাজের দেখা পাওয়া যাবে নরওয়েতে। প্রথম দেখায় মনে হবে, এটি অন্য কোনো জাহাজের মতোই। অবশ্য নিবিড়ভাবে দেখলে চোখে পড়বে জাহাজে থাকা উচ্চপ্রযুক্তির সব যন্ত্রপাতি। রয়েছে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, রাডার, জিপিএস ও স্যাটেলাইটে যোগাযোগ করার যত উপকরণ।

যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ওশান ইনফিনিটির (ওআই) দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রধান কলিন ফিল্ড। তিনি বলছিলেন, ‘জাহাজটিতে আমরা অনেক বাড়তি যন্ত্রপাতি যুক্ত করেছি। এমনভাবে নকশা করেছি, যেন এটিকে বলা যায় “রোবোটিক”।’

ওআই–এর ‘আরমাডা’ নৌবহরের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এ রোবট জাহাজ। বহরে রয়েছে ২৩টি নৌযান। এ বহর অফশোর উইন্ড ফার্ম অপারেটরদের জন্য সমুদ্রতলের জরিপ করবে। সেই সঙ্গে পরীক্ষা করবে তেল ও গ্যাসশিল্পের জন্য পানির নিচের অবকাঠামো।

জাহাজটি ৭৮ মিটার (২৫৫ ফুট) দীর্ঘ হলেও বর্তমানে এতে কাজ করছেন মাত্র ১৬ জন। একই ধরনের কাজে প্রচলিত কোনো জাহাজে ক্রু দরকার হয় ৪০ থেকে ৫০ জনের। ওআই মনে করছে, তারা এখনকার ক্রুর সংখ্যাও কমাতে পারবে।  

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ওশান ইনফিনিটির ‘আরমাডা’ নৌবহরের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এ রোবট জাহাজটি। বহরে রয়েছে ২৩টি নৌযান। এ বহর অফশোর উইন্ড ফার্ম অপারেটরদের জন্য সমুদ্রতলের জরিপ করবে। সেই সঙ্গে পরীক্ষা করবে তেল ও গ্যাসশিল্পের জন্য পানির নিচের অবকাঠামো।

জাহাজটিতে এত অল্পসংখ্যক ক্রু থাকার কারণ, শত শত মাইল দূর থেকে এর পেছনে কাজ করছেন অন্যরা।

প্রতিষ্ঠানটির রিমোট অপারেশন সেন্টার অবস্থিত ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে। সেন্টারে ঢুকলে মনে হবে আপনি কোনো চলচ্চিত্রের অত্যাধুনিক মঞ্চে হাঁটছেন। আবছা আলোয় মোড়া কক্ষটি সুবিশাল। সেখানে রয়েছে ২০টি ‘ব্রিজ স্টেশন’। এগুলো গেমিংয়ের মতো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও টাচ স্ক্রিনে একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত।

সেন্টারে থাকা নিয়ন্ত্রকেরা আসনে বসে একগুচ্ছ মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন। জাহাজের ক্যামেরা ও সেন্সরগুলো থেকে সরাসরি পাঠানো দৃশ্য এসব মনিটরে দেখা যাচ্ছে।

জাহাজের রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকলের (আরওভি) প্রশিক্ষণার্থী পাইলট ম্যারিয়ান মেজা চাভিরা বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেমনটা ঘটছে, তার সবটাই বিস্ময়ের।’

নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে স্বয়ংক্রিয় জাহাজ চলাচলব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন রুডি নেগেনবর্ন। তিনি বলেন, ক্রুদের ছাড়া জাহাজটি সম্পূর্ণ পরিচালনায় যে উচ্চপ্রযুক্তির সব ব্যবস্থা প্রয়োজন, তা স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তবে এখনো কিছুটা পথ যেতে হবে।

রুডি নেগেনবর্ন বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের অটোপাইলট ব্যবস্থা রয়েছে; যা জাহাজকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পথ দেখিয়ে চালিয়ে নেবে। এটা খুব চ্যালেঞ্জের কিছু নয়। চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে অন্য জাহাজ বা বন্দরের সঙ্গে রোবট জাহাজের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও অননুমেয় পরিস্থিতি বা খারাপ আবহাওয়ার মতো অবস্থায় এটির ঠিকঠাক কাজ করার ক্ষেত্রে।’