কঠিন পরীক্ষায় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে রাশিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে।

  • রুশ বাহিনী আকাশপথে একসঙ্গে কয়েকটি দিক থেকে বড় ধরনের হামলা চালাচ্ছে।

  • ইউক্রেন অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ। গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে হতবুদ্ধি ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় রাশিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ কথা জানিয়েছে।

এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, রুশ বাহিনী আকাশপথে একসঙ্গে কয়েকটি দিক থেকে বড় ধরনের হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়ে থাকে।

মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা বিলম্বিত করার চেষ্টায় রাশিয়া হামলার পরিধি বাড়ানোর দিকে যেতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা কয়েক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করে দিয়ে এ ধরনের হামলা প্রতিহতের সামর্থ্য ইউক্রেনের আছে।

এই কর্মকর্তা মনে করেন, রাশিয়া হামলার পরিধি বাড়ালে ইউক্রেনের জন্যও তা কাজে দিতে পারে। কারণ, এতে দূরপাল্লায় নিখুঁত হামলায় ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার অস্ত্রের সংকট আরও প্রকট হবে।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান বলেছেন, গত মঙ্গলবার যুদ্ধবিমান থেকে হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র, কৃষ্ণসাগরে থাকা যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে একযোগে এই হামলা চালানো হয়েছিল।

আরেক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার একটি ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে একেবারে ধ্বংস হয়নি। ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার ‘সামান্য’ ক্ষতি

মঙ্গলবারের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি করেছিল রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের পক্ষে থেকে তখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। যদিও পরে মার্কিন কর্মকর্তারা ওই হামলায় প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, মঙ্গলবার সকালে কিয়েভের কাছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি হয়েছিল, তা সামান্য। একজন কর্মকর্তা এটাকে ‘ছোটখাটো’ ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন।

একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিরূপণে যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার কয়েকজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। এর আগে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি এখনো সক্রিয় রয়েছে। প্যাট্রিয়টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এর রাডার সরঞ্জামকে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মেরামতের জন্য প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থাটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে আনতে হবে বলে মনে করছেন না মার্কিন কর্মকর্তারা।

বাখমুতে আমেরিকান নিহত

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ চলছে। সেখানে রুশ বাহিনীর গোলার আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেসের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা নিহত হয়েছেন। তাঁর বন্ধু ও ইউক্রেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা একটি অলাভজনক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এ কথা জানিয়েছেন।

অলাভজনক সংগঠন এএফজিফ্রির প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল পেরি ব্ল্যাকবার্নের ভাষ্য, অবসরপ্রাপ্ত আর্মি স্টাফ সার্জেন্ট নিকোলাস মাইমার বাখমুতের একটি ভবনে ছিলেন। গোলার আঘাতে সেটি ধসে পড়ে। ব্ল্যাকবার্নের সঙ্গে মাইমারও ইউক্রেনে কাজ করছিলেন।

ব্ল্যাকবার্ন বলেন, মাইমারের সঙ্গে থাকা ইউক্রেনীয়রা মনে করছেন, রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ধসে পড়া ভবনে হয়তো তিনি আটকা পড়েছেন অথবা নিহত হয়েছেন।

শস্য চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির আশা

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়ার ‘সমূহ সম্ভাবনা’ রয়েছে। গতকাল বুধবার তুরস্কের জ্যেষ্ঠ একটি সূত্র এমন আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। চুক্তিটির বর্তমান মেয়াদ আজ বৃহস্পতিবার শেষ হতে যাচ্ছে। নিজেদের শস্য ও সার রপ্তানির বাধা দূর না করলে চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া।

এর আগে গতকাল ইউক্রেনের একটি বন্দর থেকে চুক্তির অধীন সর্বশেষ জাহাজটি শস্য নিয়ে ছেড়ে যায়। রাশিয়া চুক্তিটির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত না হলে শস্য রপ্তানির বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

তুরস্কের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘(তুরস্কে) আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সেটি ইতিবাচক দিকেই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমার যা মনে হয়েছে, মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এখনো কিছু বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।’

গত বছরের জুলাইয়ে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এ শস্য চুক্তি সই হয়েছিল। শুরুতে ১২০ দিনের জন্য চুক্তিটি সই হয়। পরে কয়েক দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।