ফ্রান্সে ‘মৃত্যুর ডাক্তারের’ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ
তিনি চিকিৎসক। তিনিই কিনা ইচ্ছা করে ৩০ জন রোগীর শরীরে বিষপ্রয়োগ করেছেন! এর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কৌঁসুলির ভাষায় তিনি ‘মৃত্যুর ডাক্তার’। আজ বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের একটি আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
ওই চিকিৎসকের নাম ফ্রেডেরিখ পেচিয়ের (৫৩)। তিনি অবেদনবিদ। একসময় সহকর্মীরা তাঁকে ‘তারকা অবেদনবিদ’ হিসেবে বিবেচনা করতেন। আর এখন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলেছেন, তিনি ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধীদের একজন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ক্রিস্টিন দে কুরাইজ বলেছেন, ফ্রেডেরিখ একজন ‘ক্রমিক খুনি’ ও ‘অত্যন্ত বিকৃত’ রুচির মানুষ। তিনি রোগীর শরীরে বিষ প্রয়োগ করতেন। ফলে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হতো।
রাষ্ট্রপক্ষের আরেকজন কৌঁসুলি থেরেস ব্রুনিসো বলেছেন, ফ্রেডেরিখ কোনো চিকিৎসক নন, বরং একজন অপরাধী। যিনি মানুষ হত্যায় ওষুধ ব্যবহার করেছেন। তাঁর হাতে বিষপ্রয়োগের শিকার ভুক্তভোগীদের বয়স ৪ থেকে ৮৯ বছরের মধ্যে।
ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের বেজঁসঁ শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে কাজ করার সময় ফ্রেডেরিখ কেন রোগীদের বিষপ্রয়োগ করেছিলেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তিন মাস ধরে চলা এই বিচারপ্রক্রিয়ায়।
কৌঁসুলি কুরাইজ ও ব্রুনিসো বলেন, হত্যার পেছনে ফ্রেডেরিখের একেক সময় একেক উদ্দেশ্য ছিল। কোনো সময় তিনি যেসব রোগীর শরীরে বিষ প্রয়োগ করেছেন, তাঁদের চেতনা ফেরানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু বাঁচানোটা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং নিজের অপরাধ ঢাকাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন সহকর্মীদের তুলনায় নিজে ‘অনেক শক্তিশালী’।
আদালতে শুনানির সময় বলা হয়, যেসব সহকর্মীর সঙ্গে ফ্রেডেরিখের দ্বন্দ্ব ছিল কিংবা যাঁদের তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন, তাঁদের সুনাম নষ্ট করতে ও কলঙ্কিত করতে তিনি এমন কাজ করতেন। মূলত সহকর্মীদের অযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা করতেন তিনি।
কুরাইজ বলেন, ক্ষমতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল ফ্রেডেরিখের। আদালতে জানানো হয়, ফ্রেডেরিখ নিজের অযোগ্যতা ও হতাশার অনুভূতি মোকাবিলার জন্য রোগীদের বিষ প্রয়োগ করতেন। হত্যাকাণ্ড তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য ফ্রেডেরিখ ১০ দিন সময় পাচ্ছেন। তবে তিনি আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করেননি। তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘আমি কখনো কাউকে বিষ প্রয়োগ করিনি…আমি বিষ প্রয়োগকারী নই।’
ফ্রেডেরিখের বাবাও অবেদনবিদ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী একজন হৃদ্রোগ–বিশেষজ্ঞ। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তিনি বড় একটি বাড়িতে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
২০০৮ থেকে ২০১৭ সালে ফ্রেডেরিখ দুটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করেন। সেখানে রোগীরা রহস্যজনকভাবে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়। একই সময়ে ১২ জন মারা যান।
ফ্রেডেরিখের বিষপ্রয়োগের শিকার সবচেয়ে কম বয়সী চার বছরের টেডি। টনসিলের সমস্যার জন্য তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় তাঁর দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তবে সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়। টেডির বাবা হার্ভে হোয়েরটার টারবে আদালতে বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা দুঃস্বপ্ন। আমরা চিকিৎসার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। এখন প্রতারিত হয়েছি।’