প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং খরার পর এবার শক্তিশালী ঝড়ের কবলে পড়েছে ইউরোপের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল। ইতালি, অস্ট্রিয়া ও ফরাসি দ্বীপ কর্সিকাতে ঝড়ে তিন শিশুসহ কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসির।
বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে। ইউরোপের বিভিন্ন অংশে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিরল ধরনের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া চলছে। এর মধ্যেই আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঝড়।
ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপে ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে বাতাস বয়ে গেছে। এতে গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাসের কারণে দ্বীপের অবকাশ শিবিরগুলো তছনছ হয়ে গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বীপ এলাকায় একটি অবকাশ শিবিরের ওপর গাছ পড়ে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় প্রাপ্তবয়স্ক এক ব্যক্তিও মারা গেছেন। ঝড়ে বিচ হাটের (সৈকতে স্থাপিত বিশেষ কুটির) চালা উড়ে গিয়ে একটি গাড়িতে আছড়ে পড়ার পর ওই গাড়ির বয়স্ক এক নারী আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া সাগরে এক জেলে এবং নৌকা চালানোর সময় এক নারী মারা গেছে।
পরে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি রাল্ড ডারমানিন কর্সিকা দ্বীপে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঝড়ে ছয়জনের মৃত্যু হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন তিনি।
স্থলপথ ও সাগরপথে আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
ইউরোপে প্রচণ্ড দাবদাহ
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঝড়ের ব্যাপারে তাঁরা আগে থেকে কিছু জানতেন না। এ ব্যাপারে কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি।
রেস্তোরাঁ মালিক সেড্রিক বোয়েল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এত শক্তিশালী ঝড় আমি কখনো দেখিনি। এটিকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের মতো মনে হচ্ছিল।
ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের কিছু দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশটির মার্সেই শহরের রাস্তাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
অস্ট্রিয়ার কারিনথিয়া অঞ্চলে একটি লেকের কাছে গাছ উপড়ে পড়ে দুই কিশোরী নিহত হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ার কারণে লোয়ার অস্ট্রিয়া প্রদেশে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে গণমাধ্যম।
ইতালির তুসকানি অঞ্চলে গাছ উপড়ে পড়ার আলাদা ঘটনায় এক পুরুষ ও এক নারী নিহত হয়েছেন। ভেনিসে ঝোড়ো বাতাসের কারণে ক্যাথেড্রাল বেল টাওয়ার থেকে ইটের দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
ঝড়ের কারণে তুসকানি ও উত্তরাঞ্চলীয় লিগুরিয়াতে সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। সিসিলি দ্বীপে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
আলজেরিয়ায় ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল এলাকার জঙ্গলে দাবানলের কারণে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন অব্যাহত থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে চরম আবহাওয়া চলছে। প্রায়ই দেখা দিচ্ছে তীব্র মাত্রার তাপপ্রবাহ ও ঝড়।