রাশিয়ার ‘অপচেষ্টায়’ সহায়তাকারী দেশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর ওপর নতুন করে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে এই চার অঞ্চল রাশিয়ার অংশ করার বিষয়ে যেসব দেশ, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মস্কোকে সমর্থন দেবে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঘোষণার পরপরই রাশিয়ার ওপর এসব নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন।

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী দেশটির সরকার কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করার এখতিয়ার পাবে। এ ছাড়া ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে শাখা আছে এমন বিদেশি ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। মূলত কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনব্যবস্থা ব্যবহারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

ব্যক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর বলেছে, রাশিয়ার সমরাস্ত্র নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৪ জন ও দেশটির আইনসভার ২৭৮ জন সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আইনপ্রণেতাদের অধিকাংশই রাশিয়ার আইনসভার উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের সদস্য। ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার কারণে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। এ ছাড়া আইনসভার নিম্নকক্ষ ডুমার যেসব সদস্য এত দিন বাদ ছিলেন, তাঁদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

গভর্নর

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউললিনা ও ডেপুটি গভর্নর ওলগা কোরোবোগাতোভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন অর্থ দপ্তর। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অর্থ দপ্তর বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেসব নিষেধাজ্ঞা থেকে মস্কোকে রক্ষার যে চেষ্টা, তা দেখভাল করায় নাবিউললিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। একই দিন যুক্তরাজ্যও নাবিউললিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

পরিবার

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ভিক্টর জোলোতভ, নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়রের পরিবারের সদস্যদের ওপর একই সঙ্গে মার্কিন অর্থ এবং পররাষ্ট্র দপ্তর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র আগেই রুশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় এসব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

‘মদদদাতা’

ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ করার বিষয়টিতে যেসব দেশ, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাশিয়াকে সমর্থন দেবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বদলে ফেলতে রাশিয়ার যে অপচেষ্টা, তাতে যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশ মস্কোকে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনব আমরা।’

প্রতিষ্ঠান

রাশিয়া ও দেশটির দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কয়েক ডজন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ এবং একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন অর্থ এবং বাণিজ্য দপ্তর। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে জড়িত।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রেডিওয়াভতোমাতিকার নির্বাহীদের নিয়েও ভিন্ন সুরে কথা বলেছে অর্থ দপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের জন্য বিদেশি প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।

ভ্রমণ

রাশিয়া ও বেলারুশের ৯১০ নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রথা অনুযায়ী পররাষ্ট্র দপ্তর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া এসব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি।

তবে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞায় পড়া এসব ব্যক্তির মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে মস্কোর হয়ে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁরাও রয়েছেন।