দলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ লেবার এমপি আপসানা বেগমের
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগম তাঁর নিজ দল লেবারের বিরুদ্ধে প্রার্থী মনোনয়নপ্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। লেবার পার্টি অন্যায় ও অনিয়মে ভরা ‘ট্রিগার ব্যালট’–প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে তাঁর অভিযোগ। অন্যায়ভাবে মনোনয়নপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিলে তিনি দলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলেও ঘোষণা দেন।
গতকাল শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনের আপসানা বেগম। আপসানার সমর্থনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন লেবার দলের সাবেক নেতা এমপি জেরেমি করবিন।
‘ট্রিগার ব্যালট’ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দলের স্থানীয় সদস্যরা ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন, পরবর্তী নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট আসনে নতুন করে প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে, না বিদ্যমান এমপির প্রতি দলীয় মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান এমপি কোনো ধরনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। ভোটাভুটির সভাগুলোতেও অংশ নিতে পারেন না। গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত ট্রিগার ব্যালটে পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে নতুন করে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত বিজয়ী হয়।
এই ট্রিগার ব্যালটপ্রক্রিয়া নিয়েই অসচ্ছ্বতা ও নানা অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন আপসানা বেগম। তিনি বলেন, সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হেনস্তা, বক্তব্য দানে বাধা প্রদান, ভোটদানে বিরত রাখা, ঘুষের ব্যবহার, বাছাইপ্রক্রিয়া অনলাইনে সরিয়ে নেওয়া এবং অনেক সদস্যকে অনলাইন লগইনের সুযোগ না দেওয়াসহ আরও নানা অভিযোগের অডিও ও ভিডিও রেকর্ড লন্ডন রিজিওনাল লেবার পার্টির কাছে দাখিল করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৫০টি অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও এসবের কোনো সুরাহা করা হয়নি।
ট্রিগার ব্যালটপ্রক্রিয়ার ফলাফলের বিস্তারিত এখনও তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি উল্লেখ করে আপসানা বেগম বলেন, গত জুলাই মাসে এসব নিয়ে তাঁর আইনজীবীর পাঠানো চিঠিরও জবাব দেয়নি রিজিওনাল লেবার পার্টি।
আপসানা বেগম পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনের লেবার দলের পার্লামেন্ট সদস্য। ২০১৯ সালে প্রথমবার প্রার্থী হয়েই তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি লেবার দলের সাবেক বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারী। খাঁটি বাম রাজনীতিক হিসেবে খ্যাত জেরেমি করবিনের নেতৃত্বকালে লেবার দল দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে—জেরেমি করবিনপন্থী সোশ্যালিস্ট ধারা এবং সাবেক লেবার দলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারপন্থীমুক্ত অর্থনীতির সমর্থক ধারা। ব্লেয়ারপন্থী বর্তমান নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার লেবার দলের নেতৃত্বে আসার পর জেরেমি করবিনকেও ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগে পার্লামেন্টারি লেবার গ্রুপ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
দেশব্যাপী ‘ট্রিগার ব্যালট’ প্রক্রিয়ায় শুধু সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারীরা বাদ পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ড সাউথ আসনে করবিন অনুসারী স্যাম টেরি এমপি ট্রিগার ব্যালটে হেরে নতুন করে প্রার্থিতার লড়াইয়ে নেমেছেন। স্যাম টেরিও ট্রিগার ব্যালটপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় লেবার সদস্যদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া। কারণ, ওইসব সদস্যদের নাম কাউন্সিলের ভোটার তালিকায় পাওয়া যায়নি। তবে করবিনের বিরুদ্ধে ছিলেন কিংবা বর্তমান নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের অনুসারী কোনো এমপির ট্রিগার ব্যালটে হেরে বাদ পড়ার ঘটনা নেই।
আপসানা বেগম বলেন, ২০১৯ সালে তিনি এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপতৎরতা শুরু হয়। নির্বাচিত হওয়ার পরপর তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে আবাসন সুবিধা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ উঠে। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার প্রশাসন সেই অভিযোগে মামলা করে। শেষ পর্যন্ত আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
আপসানা বলেন, আবাসন সুবিধা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগের অগ্রভাগে ছিলেন তাঁর সাবেক স্বামী ও স্বামীর ভগ্নিপতী—যাঁরা স্থানীয় লেবার শাখার সদস্য। ট্রিগার ব্যালটপ্রক্রিয়ায়ও অন্যায় প্রভাব বিস্তার করেন তাঁরা।
এক প্রশ্নের জবাবে আপসানা বেগম বলেন, তাঁর সাবেক স্বামী বিচ্ছেদের পর থেকেই নানাভাবে প্রতিশোধমূলক আচরণ করছেন। আবার লেবার দলের বর্তমান নেতৃত্ব করবিনের অনুসারীদের বাদ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। ফলে উভয়ের নিশানায় পরিণত হয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেরেমি করবিন বলেন, ট্রিগার ব্যালটের মানসিক চাপ বিবেচনায় তিনি লেবার দলের নেতৃত্বে থাকাকালীন গর্ভবতী নারী সদস্যদের এই প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেয়ার নিয়ম করেছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আপসানা বেগম নানা অন্যায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু লেবার পার্টি তাঁর প্রতি কোনো সদয় আচরণ করেনি।
আপসানা বেগমের প্রতি সুবিচার করতে লেবার নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে করবিন বলেন, যেকোনো সময় আরেকটি সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এ সময়ে লেবার নেতৃত্বের উচিত দলকে ঐক্যবদ্ধ করা।