গাজা থেকে নাগরিকদের সরাতে ‘মানবিকতার পথ’ চাইছে দুটি দেশ

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে পুরো ভবন। ধ্বংসস্তূপের নিচে হতাহত কেউ আছে কি না, খুঁজে দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস এলাকায়, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩
ছবি: রয়টার্স

গাজা উপত্যকায় ‘মানবিকতার পথ’ খোলার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মেক্সিকো ও ইউক্রেন। আটকে পড়া গাজাবাসীকে নিরাপদে সরাতে গতকাল শনিবার দেশ দুটির পক্ষ থেকে আলাদাভাবে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। মেক্সিকো ও ইউক্রেন—দুই দেশই ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা থেকে নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফেরাতে তৎপরতা চালাচ্ছে।

মানবিকতার পথ বা হিউম্যান করিডর হলো যুদ্ধাঞ্চলে দু পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে সাময়িকভাবে একটি নিরাপদ পথ তৈরি করা, যেন আটকে পড়া মানুষদের সরিয়ে নেওয়া যায়।

মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলিসিয়া বার্সেনা বলেন, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলছেন। বারবারা লানগো নামের এক ত্রাণকর্মীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। মেক্সিকোর নাগরিক লানগো মানবিক সহায়তা সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ার্সে (ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস) কাজ করেন। তিনি গাজায় আটকা পড়েছেন।

আরও পড়ুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলিসিয়া বার্সেনা লিখেছেন, ‘আমরা মিসর হয়ে তাঁকে (ত্রাণকর্মী) বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ইসরায়েল মানবিকতার করিডর খোলার অনুমতি দিচ্ছে না। আবার তারা কাউকে বেরও হতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলের প্রতি এটি আমাদের জরুরি আবেদন। কারণ, যুদ্ধের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিবিধান আছে।’

ইউক্রেনীয় মানবাধিকারবিষয়ক ন্যায়পাল (অমবাডসম্যান) দিমিত্র লুবিনেৎস বলেন, গতকাল গাজা থেকে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সরানোর অনুমতি না দেওয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের কাছে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে।

লুবিনেৎস বলেন, ‘কেন ইউক্রেনের নাগরিকসহ বিদেশি নাগরিকদের সরানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। বিশেষ করে প্রথমে নারী ও শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সবাই জোর দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন

আলাদা করে ইসরায়েলের ইউক্রেনীয় দূতাবাসও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে, গতকাল ৬৩ শিশুসহ ২০৭ জন ইউক্রেনীয় নাগরিককে তেল আবিব থেকে রোমানিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার আরও ১৫৫ জনকে ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর বলেছেন, এ সংঘাতের ক্ষেত্রে তিনি চান তাঁর দেশের অবস্থান নিরপেক্ষ থাকুক।

গত বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর সরকার বলেছে, তাদের দেশের কয়েক শ নাগরিক ইসরায়েল থেকে বের হওয়ার অপেক্ষায় আছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। জবাবে ওই দিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে গাজায় টানা বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।

হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৯০০ মানুষ। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ জন।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি।