মন্দাকালেও প্রবৃদ্ধি বাড়ল জার্মানির

অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: রয়টার

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখান দপ্তর থেকে শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় দুই প্রান্তিকেও জিডিপি বেড়েছিল জার্মানির। কয়েক মাস আগে গ্রীষ্মকালে জ্বালানি, পরিবহন, কাঁচামাল সহ নানা সংকটে দেশটির অর্থনীতি হোঁচট খাবে বলে অনেকেই ধারণা পোষণ করেছিলেন। তবে সংকট কাটিয়ে জার্মানির অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি কীভাবে সম্ভব হলো, তা অর্থনীতিবিদদের রীতিমতো অবাক করেছে। চলমান করোনা মহামারি, পণ্য সরবরাহে বাধা, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ইউক্রেনের যুদ্ধ সত্ত্বেও দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি জার্মানির অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

কেন্দ্রীয় পরিসংখান দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি মূলত ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সম্ভব হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকট সত্ত্বেও, গ্রাহক বা ভোক্তারা প্রায় সমস্ত করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সুবিধাটি গ্রহণ করছেন। ক্রয়-বিক্রয়সহ জার্মানদের ভ্রমণের যে বাতিক রয়েছে, তা ইতিমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করেছে।

তবে জার্মানিতে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং এতে ব্যক্তিগত ব্যয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমেছে। জার্মান সরকারের প্রমোশনাল ব্যাংক কে এফ ডব্লিউর প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রিটজি কোয়েলার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য জ্বালানি সংকটের কথা উঠলেও, সরকারি প্রচেষ্টায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে জার্মানির অর্থনীতি সচল রয়েছে।

জার্মান কমার্স ব্যাংকের আরেক অর্থনীতিবিদ ইয়র্গ ক্রের্মার বলেছেন, ‘জার্মান সরকারের অনুদান প্যাকেজের কারণে কোনো মন্দা বা আগের চেয়ে বড় কোনো অর্থনৈতিক পতন হবে বলে মনে করি না।’

শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগামী বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ায় রপ্তানিতে চাপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। ফলে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কেবল ২ দশমিক ২ শতাংশ হওয়া উচিত বলে তারা জানিয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি যুদ্ধের আগের প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে।

এই বছরের প্রথম দিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে জার্মানিসহ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো চরম অর্থনৈতিক সংকটসহ রাশিয়ার গ্যাসের অভাবে প্রচণ্ড ঠান্ডায় দেশগুলোর জনসাধারণ জমে যাবে বলে অনেকেই অনুমান করেছিলেন। তবে বিগত ছয় মাসে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প খুঁজতে জার্মানিসহ অন্য দেশগুলো মরিয়া হয়ে ওঠে। রাশিয়ার গ্যাসের বিপরীতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ও নরওয়ে এবং ফ্রান্স জ্বালানি সরবরাহ করছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘এই শীতে আমাদের গ্যাস সংরক্ষণাগারগুলো পূর্ণ হয়ে আছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি আপাতত নিশ্চিত করা গেছে।’