নৌকায় একাই আটলান্টিক পাড়ি
মাত্র ২১ বছর বয়সে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তিনটি রেকর্ড গড়েছেন যুক্তরাজ্যের তরুণী জারা লকলান। ২৪ ফুট লম্বা একটি নৌকা নিয়ে নিজেই বৈঠা চালিয়ে তিনি পর্তুগাল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানায় পৌঁছান তিনি। ৪ হাজার ৩৬৬ মাইল পাড়ি দিতে তাঁর সময় লেগেছে ৯৭ দিন ১০ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
এই অবিশ্বাস্য যাত্রার মধ্য দিয়ে একসঙ্গে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন জারা। রেকর্ডগুলো হলো—এই পথে একা বৈঠা চালিয়ে পৌঁছানো প্রথম নারী তিনি। ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় একা পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি তিনি। বিশ্বে কোনো মহাসাগর একা পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী নারীও তিনি।
জারার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও বড় হয়েছেন যুক্তরাজ্যে। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সামরিক কলেজে। পরে লাফবারো ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নৌকা (রোয়িং) চালাতে শুরু করেন।
২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর পর্তুগালের লাগোস শহর থেকে যাত্রা শুরুর আগে প্রস্তুতির জন্য মাত্র তিন মাস সময় পেয়েছিলেন জারা। তিন মাসে তিনি রোয়িং শিখেছেন, পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করেছেন এবং ৮০০ কেজি খাদ্য, সরঞ্জামসহ নৌকাটি প্রস্তুত করেছেন। তাঁর যাত্রা শুরুর পর প্রথম ৪০ দিন ছিল ভয়াবহ। এই সময়ে ঝড়, প্রতিকূল বাতাস আর ধীর অগ্রগতি তাঁকে হতাশায় ফেলে দিয়েছিল।
প্রতিদিন অন্তত ১৭ ঘণ্টা বৈঠা চালিয়েছেন জারা। কখনোই টানা চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাননি। ৪০তম দিনে একবার নৌকাটি উল্টে গিয়েছিল, তখন তাঁর মুঠোফোন ভেঙে যায়। এরপর বাকি ৫৭ দিন কেটেছে একদম নিঃসঙ্গতায়।
বেশ কিছু ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে জারার। একবার ব্যারাকুডা মাছ পায়ে কামড় দেয়, আরেকবার রক্তের গন্ধ পেয়ে হাঙর ঘুরে বেড়িয়েছে তাঁর চারপাশে। এসব বিপদ সত্ত্বেও এই তরুণী বলেন, ‘আমি পুরো অভিজ্ঞতাটা দারুণ উপভোগ করেছি। ভাবিনি এতটা ভালো লাগবে।’
এই দীর্ঘ ভ্রমণ জারাকে ধৈর্য, সাহস ও নিজের মানসিক শক্তিকে চিনতে শিখিয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন রেকর্ড গড়ার ইচ্ছা আছে তাঁর। তবে আপাতত অন্য কোনো দুঃসাহসিক অভিযানের কথা ভাবছেন।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জারার অর্জনকে ‘অফিশিয়ালি অ্যামেজিং!’ বলে মন্তব্য করেছে।
সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস