জার্মানিতে চুরি হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি পতাকা
জার্মানির পার্লামেন্টে ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির আরও সংহতি ও জার্মানির মাটিতে হামাস সমর্থকদের প্রতি কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর দিনই গতকাল শুক্রবার প্রায় পুরো জার্মানি জুড়ে ইসরায়েল ও ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া রাতের অন্ধকারে ইসরায়েলের পতাকা চুরি ও ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পাঁচদিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির আরও সংহতি ঘোষণা দেন। হামাস সমর্থকদের প্রতি আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও শুক্রবার জার্মানির বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
রাইনল্যান্ড-ফালৎস রাজ্যের লুডভিগশাফেন শহরে ওড়ানো বেশ কিছু ইসরায়েলি পতাকা চুরি হয়ে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির সংহতির নিদর্শনস্বরূপ পতাকাগুলো কনরাড-অ্যাডেনাউয়ার-সেতু থেকে রাথাউস স্কোয়ার পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে কোনো এক সময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পতকাগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে মাইঞ্জ শহরে গ্রোসে ব্লেইচে টাউন হলের সামনে টানানো একটি ইসরায়েলি পতাকা ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার রাতে বার্লিনেও একই ঘটনা ঘটে। এ দিন রিনিকেনডর্ফের টাউন হলে টানানো ইসরায়েলি পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। বার্লিন শহরের কেন্দ্রে মেয়রের লাল ভবনেও সদ্য টানানো ইসরায়েলি পতাকা ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়।
রিনিকেনডর্ফের জেলা মেয়র এমিন ডেমিরবুকেন-ওয়েগনার বলেছেন, ‘পতাকা পুড়িয়ে দেওয়ার মত এই অপবিত্র ঘটনা আমাদের এবং ইসরায়েলি জনগণের সঙ্গে আমাদের সংহতিকে ব্যাহত করার একটি প্রচেষ্টা। তারপরেও হামাসের আক্রমণ ও নৃশংসভাবে হত্যা বা অপহরণ করা লোকদের জন্য আমাদের সহানুভূতি এবং তাদের স্বজনদের জন্য আমাদের সমবেদনা অটুট থাকবে।’
এদিকে, জার্মানির রাজধানী বার্লিনসহ হামবুর্গ, মিউনিখ, ম্যানহাইম এবং রেজেনসবার্গের মতো অন্যান্য শহরগুলোতে ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি সমর্থক সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শহরগুলিতে পুলিশি টহল বেড়েছে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে শহরে তিনটি ফিলিস্তিনিপন্থী সংগঠনে বিক্ষোভের অনুমতির বিষয়টি ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রশাসনিক আদালত বেআইনী ঘোষনা করেছিল। পরে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি এই সমাবেশের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রশাসনিক আদালত শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেছে যে, সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ‘সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা।’ হাঙ্গামা হবে, সেই আশঙ্কায় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না, তা সমর্থন করা যায় না।
শনিবার ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে ফিলিস্তিনিপন্থী সংগঠনগুলোর সংহতি কর্মসূচির পাশাপাশি, জার্মান-ইসরায়েলি সোসাইটি শহরের পল স্কোয়ার ও গোয়েথে স্কোয়ারে দুটি সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
এদিকে, জার্মানিতে ফিলিস্তিনি সমর্থক ও সংহতি সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাভারিয়া রাজ্যের আইনমন্ত্রী জর্জ আইজেনরিচ জার্মান সরকারকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করার আহবান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থকেরা জার্মানির রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশ করছে।
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।