ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন
ইউক্রেনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভের বাসিন্দা পাভলো নেব্রোভ। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার সংবাদ সম্মেলন দেখার জন্য। খারকিভ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে সেই সংবাদ সম্মেলনের ভেন্যু।
পাভলোর দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তিন বছরের বেশি সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় বৈঠকে বসেন মার্কিন ও রুশ নেতা। তবে এই বৈঠক থেকে দুই নেতা কোনো সাফল্য বয়ে আনতে পারেননি। আর পুতিনকে দেওয়া লালগালিচা সংবর্ধনা গোটা যুদ্ধজুড়ে ব্যাপক রুশ হামলার শিকার খারকিভ থেকে তাঁর জন্য সুস্পষ্ট জয় হিসেবেই দেখা হয়।
থিয়েটার ব্যবস্থাপক ৩৮ বছর বয়সী পাভলো বলেন, ‘যা ধারণা করেছিলাম, সেই ফলাফলই আমি দেখলাম। আমি মনে করি, এটা পুতিনের জন্য অনেক বড় কূটনৈতিক বিজয়। তিনি পুরোপুরি নিজের বৈধতা আদায় করে নিয়েছেন।’
২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে পুতিনকে এড়িয়ে চলছে পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই ধারা ভাঙলেন ট্রাম্প।
আলাস্কার এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই সফরকে পুতিনের ‘ব্যক্তিগত জয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউক্রেনকে এই বৈঠকে বাইরে কারণেই কেবল ক্ষুব্ধ নন পাভলো, এই বৈঠককে সময়ের অপচয় বলেও মনে করছেন তিনি। পাভলো বলেন, ‘এটা ছিল একটি অর্থহীন বৈঠক। ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা ইউক্রেনকে নিয়েই সমাধান করা উচিত—ইউক্রেনীয়দের, দেশটির প্রেসিডেন্টের অংশগ্রহণের মাধ্যমে।’
বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের এবং জেলেনস্কিকে আলোচনার বিষয়ে অবহিত করেন ট্রাম্প। আগামী সোমবার জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন।
কোনো চুক্তি ছাড়াই ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক শেষ হয়েছে। ট্রাম্প সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি, যা গণমাধ্যমবান্ধব মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক।
খারকিভের একটি রৌদ্রোজ্জ্বল পার্কে পাভলোর সঙ্গে হাঁটছিলেন ওলিয়া দোনিক। বৈঠক ঘিরে যা ঘটেছে, তাতে অবাক হননি ৩৬ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, ‘কোনো অর্জন ছাড়াই এটি শেষ হয়েছে। ঠিক আছে, চলুন ইউক্রেনে আমরা আমাদের জীবন চালিয়ে নিই।’
ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের পর কিয়েভ জানিয়েছে, ৮৫টি ড্রোন ও ১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
৫০ বছর বয়সী আলোকচিত্রী ইরিনা দারকাচ বলেন, ‘আলোচনা হোক বা না হোক, খারকিভে প্রতিদিনই হামলা হয়। নিশ্চিতভাবে খারকিভ কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখছে না।’ রাশিয়ার হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিদিন দেশজুড়ে যে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়, সে জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
এই নারী আলোকচিত্রী দের্জপ্রমের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আধুনিক যুগের ছাপ থাকা এই স্থাপনাটিকে সোভিয়েত আমলের প্রথম দিকে তৈরি আকাশচুম্বী ভবনগুলোর একটি মনে করা হয়। গত বছর এক হামলায় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ইরিনা বলেন, ‘আমরা জয়ে বিশ্বাসী। আমরা জানি, এটা আসবে। তবে একমাত্র ঈশ্বর জানেন, কে আমাদের এটা এনে দেবেন।’
এই আলোকচিত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস হারাই না। আমরা অনুদান দিচ্ছি, যত দূর পারছি সাহায্য করছি। আমরা আমাদের কাজ করছি, আর ট্রাম্প কী করছেন, তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না।’