অভিন্ন শরণার্থী নীতি গ্রহণ করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

নৌকায় করে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা অভিবাসীদের
ফাইল ছবি: এএফপি

অনেক বছর ধরে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০১৫ সালে মূলত সিরিয়া যুদ্ধের কারণে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করার পর থেকে ইইউ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য সে সংকট বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অথচ শরণার্থীদের প্রশ্নে ইইউ এখনো কোনো সাধারণ নীতি সম্পর্কে ঐকমত্যে আসতে পারেনি। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ শরণার্থীদের ন্যায্য বণ্টনের বিরোধিতা করে আসছে। জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইডেনের মতো দেশ একাই শরণার্থীর বোঝা কাঁধে নিতে চাইছে না। ফলে কিছু বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কোনোরকমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অবশেষে চলতি সপ্তাহেই এ ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

ইইউ অভিবাসন কমিশনার ইভা ইয়োহান্সসন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, একসঙ্গে কাজ করলে তবেই ইউরোপ শক্তিশালী হতে পারে। মানবিক অথচ কড়া পন্থায় অভিবাসন সামলানো গেলে সবার সুবিধা হবে।

তবে সম্ভাব্য বোঝাপড়ার আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ এখনো শরণার্থীদের ন্যায্য বণ্টন মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের পপুলিস্ট (লোকরঞ্জনবাদী) সরকার বহিরাগত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে। ফলে আপস হিসেবে তারা শরণার্থী পরিস্থিতি সামলাতে অর্থ বা লোকবল দিতে সম্মতি জানাতে পারে। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমানায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের প্রাথমিক মূল্যায়নের নিয়ম চালু করার বিতর্কিত প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইয়োহান্সসন বলেন, এ যাত্রায়ও ঐকমত্য সম্ভব না হলে আখেরে সবারই ক্ষতি হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ইইউর সব সদস্যদেশ সাধারণ শরণার্থী নীতি মেনে নিলেও এমন আপস মীমাংসার সমালোচনা করছে অক্সফামের মতো অনেক বেসরকারি সংগঠন। তাদের মতে, ইউরোপকে দুর্গের মতো অভেদ্য করে তুলে শরণার্থীদের বাইরে রাখার চেষ্টা চলছে।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক নিজের গ্রিনস দলের মধ্যেও সমালোচনার জবাবে বলেন, তিনি নিজে সীমান্তের প্রক্রিয়াকে সঠিক পথ মনে না করলেও শরণার্থীদের ন্যায্য বণ্টনের ক্ষেত্রে আপাতত এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ব্রাজিল সফরকালে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকা জানিয়েছে, গ্রিনস দলের প্রায় ৭৩০ সদস্য এক চিঠিতে দলের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ইইউ শরণার্থী আইনের প্রস্তাবিত সংস্কারের সমালোচনা করেছেন।

বেয়ারবক আরও বলেন, অনেক দিন পর এই প্রথম ইইউর সব দেশ ভিন্ন স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রশ্নে সাধারণ সমাধানসূত্রের জন্য চেষ্টা করছে। ইইউর সীমান্তবর্তী যেসব দেশে বেশিরভাগ শরণার্থী প্রবেশ করে, সেসব দেশের দৃষ্টিভঙ্গি মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় একেবারে ভিন্ন। তাই ঐকমত্য অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে নিজের দেশ ও ফ্রান্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, একমাত্র এই দুটি দেশই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে ইউরোপের বহিঃসীমানা থেকে শরণার্থীদের গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। অন্য দেশগুলো এখনো সেই প্রক্রিয়া মেনে না নেওয়ায় তাদের সমালোচনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন