খাদ্যদ্রব্যের দাম আরও কমেছে

গম খেত
ফাইল ছবি

ইউক্রেনে আটকা থাকা খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরুর প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে। সারা বিশ্বে জুলাই মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমেছে। এর আগে গত মার্চ মাসে বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে এর পর থেকে খাদ্যদ্রব্যের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। শুক্রবার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ তথ্য জানায়। এদিকে গতকাল এক দিনে তিনটি শস্যবাহী জাহাজ ইউক্রেন ছেড়েছে। খবর রয়টার্সের

এফএও যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে গত মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম কিছুটা কমতে দেখা গেছে। এতে দেখা গেছে, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় দামের সূচক ছিল ১৪০ দশমিক ৯ পয়েন্ট, যা জুনে ছিল ১৫৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট। মার্চ মাসে এ সূচক ঠেকেছিল ১৫৮ দশমিক ৫ পয়েন্টে। এপ্রিলে ছিল ১৫৮ দশমিক ৩ পয়েন্ট। মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় দামের সূচক ছিল ১৫৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট। জুলাই মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমলেও গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় তা এখনো ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

এফএওর তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার পেছনে রুশ সেনাদের ইউক্রেনে হামলা, প্রতিকূল আবহাওয়া, অতি উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ মাক্সিমো তোরেরো বলেন, খুব উচ্চপর্যায় থেকে খাদ্যপণ্যের দাম কমার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অন্ধকার দৃষ্টিভঙ্গি, মুদ্রার অস্থিরতা ও সারের উচ্চ দাম ভবিষ্যতে উৎপাদন ও কৃষকদের জীবিকাকে প্রভাবিত করতে পারে। এসব বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এর আগে গত জুন মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমবে। টানা চার বছর বিশ্বে উৎপাদনের ঊর্ধ্বগতির পর এবারই প্রথম খাদ্যশস্য উৎপাদন কমতে পারে। ২০২১ সালের তুলনায় এ অর্থবছরে ১ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য কম উৎপাদিত হতে পারে।

জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস ও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। অন্যদিকে বাজারে গমের দামও ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো থেকে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক ও জাতিসংঘের চুক্তির ফলে গমের দাম কমেছে। জুলাই মাসে ভুট্টার বৈশ্বিক গড় দামের সূচক কমেছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এর পেছনেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার চুক্তির বিষয়টি কাজ করেছে। এফএও বলছে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ভুট্টার উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

ইউক্রেন ছাড়াল আরও ৩ জাহাজ

এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। এর মধ্যেও কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো থেকে শস্যবাহী আরও তিনটি জাহাজ গতকাল গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এ ছাড়া পণ্য নিতে আরেকটি জাহাজের গতকালই ইউক্রেনে আসার কথা রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেনের বন্দরে আসা এটিই প্রথম জাহাজ।

তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের স্বাক্ষরিত নিরাপদ চলাচল চুক্তির অধীনে এই শস্য রপ্তানি শুরু হয়েছে।

পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধ জোরদার হওয়া সত্ত্বেও ২২ জুলাই হওয়া চুক্তিটিকে একটি বিরল কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষের মধ্যেও ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের অবকাঠামোমন্ত্রী ওলেকসান্দর কুবরাকভ বলেন, ‘আমরা আশা করি, অংশীদারদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাজটি জাতিসংঘ ও তুরস্ক চালিয়ে যাবে। আমাদের বন্দরগুলো থেকে খাদ্য রপ্তানির বিষয়টি স্থিতিশীল হবে।’ যুদ্ধ শুরুর পর ওদেসা বন্দর থেকে গত সোমবার লেবাননের উদ্দেশে প্রথম শস্যবাহী জাহাজ ছেড়ে যায়।

ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়ার ধাতব পণ্য উত্পাদকদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে তারা এ সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাববে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল চোরনোমরস্ক ও ওদেসা বন্দর থেকে যে তিনটি জাহাজ ছেড়ে গেছে, তাতে ৫৮ হাজার ৪১ টন ভুট্টা আছে।

এদিকে পাঁচ মাস যুদ্ধের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সপ্তাহে বলেছেন, দেশটির পূর্বাঞ্চলে তাঁর সশস্ত্র বাহিনী চাপের মধ্যে রয়েছে। মস্কো চাইছে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে।

জেলেনস্কি বলেছেন, আভদিভকা ও পিস্কি অঞ্চলে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। সম্প্রতি এ শহরের কিছু অংশ রুশ বাহিনী দখল করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ইউক্রেন। এদিকে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনাদের সূত্রে দাবি করেছে, পিস্কি অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। এর বাইরে উত্তরের দোনেৎস্কের বাখমুট শহরেও লড়াই চলছে।

গত বৃহস্পতিবার ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের জন্য ইউক্রেনের এই যুদ্ধ সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তের সৃষ্টি করেছে। এ যুদ্ধে রাশিয়াকে জিততে দেওয়া উচিত নয়।