ইউক্রেনের সেনাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে রুশ বাহিনী কি পিছু হটছে

যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কুপিয়ানস্ক রেলওয়ে জংশন পুনরায় দখল করে নিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের বাহিনী মাত্র তিন দিনে দেশটির উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ২ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটারের (৯৬৫ বর্গমাইল) বেশি এলাকা রুশ সেনাদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’ জানাচ্ছে এ তথ্য।

পুনর্দখলকৃত এলাকার বেশ কিছু স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার বাহিনীর কাছ থেকে নিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। জোরাল পাল্টা আক্রমণের মুখে রুশ সেনারা নিজেদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ লুহানস্ক প্রদেশে পিছু হটতে শুরু করেছেন।

কুপিয়ানস্ক রেলওয়ে জংশনও পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়েছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা ও সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠাতে রুশ সেনারা এ জংশন ব্যবহার করত। এ অবস্থায় কুপিয়ানস্ক এবং ইজিয়াম শহরে দ্রুত কামান ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছে রাশিয়া। এরই মধ্যে কুপিয়ানস্কে অবরুদ্ধ রুশ সেনাদের সহায়তা করতে বিমান বাহিনীর ইউনিট পাঠানো হয়েছে।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর কুপিয়ানস্ক পুনর্দখলের অর্থ, উত্তরাঞ্চলে রাশিয়ার সেনাদের পুনরায় পাঠানো আরও কঠিন হবে। কেননা, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে নিজেদের মধ্যে খাবার, জ্বালানি ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে রেলপথের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হয় রুশ সেনাদের।

রাশিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রুশ সেনারা ইজিয়াম ত্যাগ করেছেন এবং ইউক্রেন বাহিনীর আক্রমণের মুখে কুপিয়ানস্ক ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ায় এ শহর থেকেও পিছু হটছেন।

রেলওয়ে জংশন কুপিয়ানস্কও পুনরায় দখলে নিয়েছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে এ জংশন ব্যবহার করে থাকে মস্কো। এ অবস্থায় রাশিয়া কুপিয়ানস্ক ও ইজিয়াম শহরে দ্রুত কামান ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছে। এরই মধ্যে কুপিয়ানস্কে অবরুদ্ধ রুশ সেনাদের সহায়তা করতে বিমান বাহিনীর ইউনিট পাঠানো হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্ব

রাশিয়ার আক্রমণের মূল মনোযোগ কোথায় সন্নিবেশিত হবে—দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন যুদ্ধক্ষেত্র নাকি খারকিভ ঘিরে উত্তর–পূর্বাঞ্চল, সে বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে নজর রেখে চলেছেন ইউক্রেনের সামরিক পরিকল্পনাকারীরা।

খেরসন দুই পক্ষের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভাব্য আক্রমণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার জন্য শহরটির নিয়ন্ত্রণ মানে সেখানখানকার পোতাশ্রয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা। ফলে রুশ-অধিকৃত ক্রিমিয়ায় নৌপথে খাদ্যশস্য সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া অঞ্চলটি দখলে থাকলে ইউক্রেনের ওদেসা বন্দরে ভবিষ্যতে যেকোন ধরনের অভিযান চালানো সহজ হবে রাশিয়ার জন্য।

অপরদিকে ইউক্রেনের জন্য, দক্ষিণের প্রবেশদ্বার খেরসনকে পুনরুদ্ধার করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর প্রথম দিকে রুশ বাহিনীর দখল করা শহরগুলোর মধ্যে একটি ছিল খেরসান। ফলে এটি পুনরুদ্ধার করতে পারলে ইউক্রেনীয়দের জন্য মনোবল বৃদ্ধির টনিক হিসেবে কাজ করবে। এটি ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দিনিপার নদী অতিক্রম করতে সহায়তা করবে এবং পূর্ব দিকে গাড়ি চালানোর সুযোগ পাওয়া যাবে।

কৌশলগত কারণে খালটি যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীর লক্ষ্য ছিল। কারণ এটি ক্রিমিয়ায় ৮৫ শতাংশ পানি সরবরাহ করছিল। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকেই খালটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইউক্রেন।

ইউক্রেন কৌশলে দিনিপার নদী রক্ষায় প্রায় ২০ হাজার রুশ সৈন্যকে নামিয়েছে। এর মাধ্যমে খোদ খেরসন শহরের মধ্যেই রাশিয়ান ইউনিট থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

খেরসনের প্রবেশদ্বারে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার জন্য পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ান বাহিনী আনা হয়েছিল। কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাদের বড় একটা অংশ পুনরায় সরবরাহ ব্যাবস্থা থেকেও বিচ্ছিন্ন।

আরও পড়ুন

দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ, উত্তরাঞ্চলে আঘাত

পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে রাশিয়া আটকে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে ইউক্রেনের অভিযান চালানোর প্রধান কেন্দ্র হতে চলেছে দক্ষিণাঞ্চল। দক্ষিণের কৌশলগত মূল্য থাকা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে সেখানে ইউক্রেনীয় হামলা সামরিক পরিকল্পনাকারীদের একটি বিভ্রান্তি ছিল। এখন ইউক্রেনের আক্রমণের প্রধান ধাক্কা উত্তর-পূর্বে আসছে। সেখানে তাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে রাশিয়ার প্রতিরোধ ভেঙে পড়েছে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ইতিমধ্যে ইজিয়াম শহরটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে। শুধু সেখানকার শহর থেকে নয়, অঞ্চল থেকেও সাধারণ রাশিয়ানরা পিছু হটছে।

এই সফলতাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন লাইমান শহরের ওপর জোর দিচ্ছে। আক্রমণাত্মক গতি বজায় রেখে রাশিয়ার বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আতঙ্কজনক অনুভূতিকে কাজে লাগাতে চাইছে ইউক্রেন। রাশিয়ার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে এই অঞ্চলে পরাজয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চলছে।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর উত্তর-পূর্ব দিকের অগ্রযাত্রায় কতটা উত্তাপ থাকে সেটি এখন দেখার বিষয়। রাশিয়ার বাহিনী সম্ভবত একটি প্রতিরক্ষামূলক সীমানায় ফিরে আসবে, যেখানে তারা ইউক্রেনের আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করে রাশিয়ার পিছু হটা বন্ধ করবে।

এমনটা মনে করার কারণ হলো, সম্ভবত ইউক্রেনের কৌশলগত লক্ষ্য কোনো পর্যায়ে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে আসবে। কারণ এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অনেক বেশি ঝুঁকি রয়েছে।

আপাতত, এটা স্পষ্ট যে রাশিয়া উত্তর-পূর্বে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে বাহিনীকে প্রত্যাহার করছে। ইউক্রেনের সামরিক আক্রমণের মুখে ভেঙে পড়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন:

১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করার দাবি ইউক্রেনের