অভিন্ন হুমকি নিয়ে চীন-রাশিয়ার একত্রে কাজের অঙ্গীকার

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বাঁয়ে) ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
রয়টার্সের ফাইল ছবি

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যুগান্তকারী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বেইজিংয়ে দুই দিনের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্মেলনের ফাঁকে ‘প্রিয় বন্ধু’ পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এই সুবাদে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করেছেন তাঁরা। চীন ছাড়ার আগে পুতিন সাংবাদিকদের বলে গেছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও অভিন্ন হুমকি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন গত বুধবার শেষ হয়।

পুতিন এমন সময়ে সির বিআরআই সম্মেলন যোগ দিলেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। অন্যদিকে ইউরোপে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্মেলনে বিশ্বের ১৩০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এ আয়োজনের মাধ্যমে বৈশ্বিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে চীন। এ ছাড়া সম্মেলনে অতিথি হিসেবে পুতিনকে আমন্ত্রণ করায় এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই যে চীনের চোখে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা কে।

সম্মেলনের শেষ দিন বুধবার এই দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, চীন-রাশিয়া ‘অভিন্ন হুমকি’ মোকাবিলায় কাজ করবে। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে গাজা সংকট উত্তরণে যুদ্ধবিরতির কথা বলে আসছে চীন ও রাশিয়া। তবে হামাসের হামলার ঘটনায় দেশ দুটি এখন পর্যন্ত নিন্দা জানায়নি।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে চীন-রাশিয়া অংশীদারত্বকে ‘দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার’ বলে এ সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন সি চিন পিং। এ ছাড়া রাশিয়াকে দীর্ঘদিনের ভালো প্রতিবেশী ও পারস্পরিক উপকারী সহযোগী হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, দুই দেশের ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে এবং তাদের লক্ষ্যও অভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থায় দুটি দেশই একে অপরকে বিপদের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা পরস্পর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।

এদিকে বিআরআই প্রকল্পে বেইজিং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রাস্তা, সেতু, বন্দর ও রেলওয়ে নির্মাণে এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তবে বিআরআই ফোরামে পুতিনের প্রতি সির সংহতি প্রকাশ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে গভীর বিভাজনেরও ইঙ্গিত দেয়। এবারের সম্মেলনে ২৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা অংশ নিয়েছেন। অথচ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বিআরআই সম্মেলনে ৩৭টি দেশ অংশ নিয়েছিল।