ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা শেষ হলো

জমজমাট ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা
ছবি: সরাফ আহমেদ

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলার ৭৫তম আসর শেষ হয়েছে। জার্মানি এবং বিশ্বের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করা হয়।

বিশ্বের নানা প্রান্তের বইপ্রেমীদের পদচারণে জমজমাট হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশক থেকে শুরু করে বইবিষয়ক নানা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত মানুষদের পাঁচ দিনের মিলনমেলা ছিল জৌলুশে ভরপুর।

বইমেলাকে কেন্দ্র করে ফ্রাঙ্কফুর্ট যেন উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছিল। মেলায় এবার হাজির হয়েছিলেন ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষ। বই প্রকাশক ও লেখকদের বৃহত্তম এই বইমেলায় মিলিত হয়েছিলেন ১৩০ দেশের বইপ্রেমী।

বইমেলার শেষের দিন লেখক সালমান রুশদীকে শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ২০২২ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে তিনি জনসমক্ষে খুব কম উপস্থিত হতেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আশাবাদ রয়ে গেছে, লেখা হচ্ছে একধরনের আশাবাদ। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বজুড়ে সব দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে।’

ফ্রাঙ্কফুর্টে বইপ্রেমী বাংলাদেশিদের আয়োজিত বাংলা বইমেলা
ছবি: সরাফ আহমেদ

বইমেলায় লিটপ্রোম সংগঠন কর্তৃক ফিলিস্তিনি লেখিকা আদানিয়া শিবলীর সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত করায় দুঃখ প্রকাশ করেন সালমান রুশদী। তিনি বলেন, ‘তার এই পরিস্থিতির জন্য আমার খারাপ লাগছে। আমি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার কারণে এই ফিলিস্তিনি লেখিকার পুরস্কারটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সাল থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ফ্রাঙ্কফুর্টের আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে। মেলায় ছিল, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের প্যাভিলিয়ন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন লেখকের প্রায় ৫০০ বই বাংলা ও ইংরেজি বই প্রদর্শন করা হয়।

মেলায় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া বার্লিন থেকে মেলায় হাজির হয়েছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন।

ফ্রাঙ্কফু্র্ট বইমেলার পরিচালক ইয়ুরগেন বুস বলেন,  ‘এই মেলার সাফ্যল্যের কারণ হলো, আমরা বছরের পর বছর ধরে, প্রকাশক, লেখক ও পাঠকদের আগ্রহ প্রাসঙ্গিকতা ও চাহিদা অনুসরণ করছি। সারা বিশ্ব থেকে মানুষ এখানে আসে, কারণ তারা জানে যে ফ্রাঙ্কফুর্টে উপস্থিতি তাদের নিজস্ব ব্যবসার জন্য অপরিহার্য।’

এবারের বইমেলার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে অতিথি দেশ ছিল স্লোভেনিয়া। আগামী বছর ২০২৪ সালে ৭৬তম ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৬ থেকে ২০ অক্টোবর। সেই মেলায় অতিথি দেশ হবে ইতালি।

আরও পড়ুন

এই মেলা চলাকালে ফ্রাঙ্কফুর্টে বইপ্রেমী বাংলাদেশিরা ফ্রাঙ্কফুর্ট নর্থ ভেস্ট কেন্দ্রের সালবাউ টিটস ফোরামে বাংলা বইমেলা আয়োজন করে। আয়োজকেরা জানালেন, মেলার মাধ্যমে প্রবাসে বাংলা চর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রয়াসেই এই বাংলা বইমেলা।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে শুদ্ধস্বর ডটকমের হাবিব বাবুল, ময়েদুল ইসলাম, খন্দকার এম গণি এবং বাবু সরদার  আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।

মেলা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন মহুয়া কবীর, লিপি আহমেদ, শিউলি ফিরোজ,  নিম্নি কাদের, জালাল আবেদিন, আতিকুর রহমান ও মায়দুল ইসলাম তালুকদার।