ইউক্রেনের যেসব এলাকায় এখন রুশ আধিপত্য

ইউক্রেনের রাস্তায় দেশটির সেনাবাহিনীর টহল
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষের কেউই।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছিলেন, শীত মৌসুমে ইউক্রেনে বড় সফলতা পেতে পারে মস্কো। বাস্তবে সেটাও হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র–ড্রোন হামলা জোরদার করেছে রুশবাহিনী। চলছে স্থলের লড়াইও।  

আরও পড়ুন

বাখমুত দখলের লড়াই

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর বাখমুত। শহরটির দখল নিয়ে দুই পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। ইউক্রেনের দাবি, শহরটির বেশির ভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। অন্যদিকে গত বুধবার রুশ ভাড়াটে সেনাদল ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন দাবি করেন, বাখমুতের পূর্বাঞ্চলের প্রায় পুরোটাই তাঁর বাহিনী দখল করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন
বিধ্বস্ত বাখমুত শহর
ছবি: রয়টার্স

ইনস্টিটিউট ফর দি স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ওয়াগনার গ্রুপের এমন দাবি সত্য বলেই মনে হয়। তবে সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বাখমুতের কৌশলগত গুরুত্ব সীমিত। শহরটি যদি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেও যায় তবে এর বাইরে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে খুব একটা কাজে আসবে না।

সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে রুশবাহিনী বসন্তকালে যেসব অর্জন করতে চেয়েছে, সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাখমুতের পরিস্থিতি সেটার বড় প্রমাণ। অন্যদিকে পশ্চিমা সেনা কর্মকর্তাদের মতে, বাখমুতের আশপাশে রাশিয়ার ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার সেনা হতাহত হতে পারে।

আরও পড়ুন

স্থিতিশীল দক্ষিণাঞ্চল

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল এখন তুলনামূলক শান্ত রয়েছে। তবে ওই অঞ্চলের খেরসনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ। গত বছরের নভেম্বরে খেরসনের নিপ্রো নদীর পূর্বাংশ থেকে রুশ সেনারা পিছু হটেছে। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ইউক্রেনের বাহিনী সহায়তা হিসেবে যেসব হিমার্স রকেট ব্যবস্থা পেয়েছে, তাতে খেরসনে তারা কিছুটা সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

গত বুধবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, খেরসনের পশ্চিমাঞ্চলে তারা রাশিয়ার একটি গোলাবারুদের ডিপো ধ্বংস করেছে। তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, এই অঞ্চলে নিজেদের সেনা, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের নিরাপত্তায় শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। তাই খেরসনের উপকণ্ঠে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্ত অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ কম।

আরও পড়ুন

পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে

যুদ্ধের শুরুর দিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে দ্রুত পৌঁছে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, দ্রুত কিয়েভের পতন ঘটবে। বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তবে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে সফলতা পায়। কিয়েভের পরিবর্তে তারা ইউক্রেনের সুমি, খারকিভ, খেরসন, মারিউপোলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেয়। বিভিন্ন জায়গায় বেসামরিক স্থাপনা বিশেষত খাবার, পানি, জ্বালানি সরবরাহ লাইনে হামলা চালায় রাশিয়া।  

অন্যদিকে যুদ্ধের শুরুর দিকে ইউক্রেনের বাহিনী কিছুটা পশ্চাৎপদ ছিল। তবে পশ্চিমা অর্থ–অস্ত্র সহায়তা যতই বাড়ে, ইউক্রেনের বাহিনীর আত্মবিশ্বাসও ততই বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বর–অক্টোবর নাগাদ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তারা। এসবের জেরে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চল থেকে পিছু হটে রুশবাহিনী। খারকিভ থেকে রুশ সেনাদের সরে যাওয়া ও খেরসনে পাল্টা চালিয়ে যাওয়াকে যুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনীর অন্যতম অর্জন বিবেচনা করা হয়।

আরও পড়ুন

রাশিয়ার ভরসা আকাশপথ

ইউক্রেন যুদ্ধে স্থলপথে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেয়ে রুশ বাহিনী আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে। এসব হামলা থেকে বাঁচতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সহায়তা পেয়েছে–পাচ্ছে কিয়েভ। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনজুড়ে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মস্কো। কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের ভবন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কেঁপে উঠেছে। নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন।

ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, এদিন অন্তত ৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রুশবাহিনী। উত্তরের খারকিভ থেকে দক্ষিণের ওদেসা, পশ্চিমের জাইটোমি থেকে কিয়েভেও হামলা হয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এসব হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এমনকি হামলার পর এদিন জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের পারমাণবিকবিষয়ক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইএইএ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।

পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে হামলা ও পাল্টা হামলার বিষয়ে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘আমরা এটা কীভাবে চলতে দিতে পারি?’