ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া ২৮ দফা পরিকল্পনায় উদ্বেগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া পরিকল্পনাটি কিয়েভের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়। ইউক্রেনের মিত্ররা ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পর তিনি এ কথা বললেন।
গতকাল শনিবার সকালে ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের নেতারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের দেওয়া পরিকল্পনায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা ন্যায়সংগত ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি। তবে এটির ওপর আরও কাজ করতে হবে। কারণ, সীমানা পরিবর্তন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা কমিয়ে আনাসহ কিছু বিষয় উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যেকোনো উপায়ে এ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
আজ রোববার ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৈঠক করবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও বৈঠকে অংশ নেবেন। যুক্তরাজ্যের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছিলেন, এ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। কারণ, এটি রাশিয়ার অনুকূলে বলেই মনে হচ্ছে। আর এতে রাজি হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আছে ইউক্রেন।
ট্রাম্প তাঁর ২৮ দফা পরিকল্পনা মেনে নিতে ইউক্রেনকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এটি একটি সমাধানের ‘ভিত্তি’ হতে পারে।
ট্রাম্প তাঁর ২৮ দফা পরিকল্পনা মেনে নিতে ইউক্রেনকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, বর্তমান খসড়া পরিকল্পনাটি কিয়েভের জন্য তাঁর চূড়ান্ত প্রস্তাব কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, এটি আমার চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়।’
এ সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে এ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া জি–২০ সম্মেলনে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও নরওয়ের নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাও এতে স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, খসড়াটি একটি ভিত্তি হলেও এটির ওপর আরও কাজ করা দরকার। টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের নীতি খুবই স্পষ্ট—জোরপূর্বক সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না।’
এ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। কারণ, এটি রাশিয়ার অনুকূলে বলেই মনে হচ্ছে। আর এতে রাজি হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আছে ইউক্রেন।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ও অস্ত্র কমানোর বিষয়টি নিয়েও বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি ভবিষ্যৎ আক্রমণের মুখে ইউক্রেনকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে যথাক্রমে ইইউ ও ন্যাটো সদস্যদের সম্মতি প্রয়োজন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের ২৮ দফা পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া, সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ও অস্ত্র কমানোর বিষয় মেনে নেওয়া এবং ন্যাটোয় যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। এতে এমন কিছু প্রস্তাবও রয়েছে, যাতে মস্কো আপত্তি জানাতে পারে এবং মস্কোকে তাদের দখল করা কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
জি–২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া নেতাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, খসড়াটি একটি ভিত্তি হলেও এটির ওপর আরও কাজ করা দরকার। টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের নীতি খুবই স্পষ্ট—জোরপূর্বক সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করার যেকোনো পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা উচিত এবং এটি উভয় দেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও অর্থ বা অস্ত্র পায় বা মস্কোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তবে ইউক্রেন জিততে পারবে—এটা ভাবা একটা ‘অলীক কল্পনা’।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, মার্কিন পরিকল্পনা প্রায় চার বছরের এ সংঘাতের চূড়ান্ত সমাধানের ভিত্তি হতে পারে। তবে তিনি বলেন, কিয়েভ এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। কিন্তু কিয়েভ বা তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতির বাস্তবতা বুঝতে পারছে না।