অনলাইন প্রতারণার নাম ‘পিগ বুচারিং’: বিশ্বাস করে কোটি কোটি টাকা হারাচ্ছে মানুষ
ইন্টারনেটে পরিচয় দুই তরুণ-তরুণীর। শুরুতে একটু খুনসুটি, ভালো লাগা। ধীরে ধীরে তা গড়ায় ভালোবাসায়। এভাবেই চলতে থাকে কয়েক মাস। তারপর? একজনের হৃদয়টা ভেঙে চুরমার হয়, খালি হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। অপরজন তখন বিপুল অর্থ হাতিয়ে দিব্যি থাকেন খোশমেজাজে।
কী মনে হচ্ছে? ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে এমন প্রতারণা হরহামেশাই ঘটে? কিন্তু না, ওপরে যে গল্পটি বলা হয়েছে, তার শিকড় অনেক গভীরে। প্রতারণার এই ধরনটি সাড়া ফেলেছে বছর খানেক আগে, ২০২১ সালে। প্রতারণাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিগ বুচারিং’ বা ‘শূকর জবাই’।
প্রতারক যখন বুঝতে পারেন তিনি ‘শূকরকে’ খাবার খাইয়ে মোটাসোটা করে ফেলেছেন, তখনই সেটিকে ‘জবাই’ করা হয়। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করা সব অর্থ নিয়ে গায়েব হয়ে যান তিনি।
এমন অদ্ভুত নামকরণ এসেছে চীনা শব্দ ‘শা জু পান’ থেকে। খুলে বললে এই শব্দের অর্থ দাঁড়ায়, একটি শূকরকে খাইয়েদাইয়ে স্বাস্থ্যবান করে সেটি জবাই করা। তবে পিগ বুচারিং প্রতারণায় শূকর নয়, একজন মানুষের পেছন সময় দিয়ে তাঁর আস্থা অর্জন করা হয়। পরে সময় মতো ধোঁকা দিয়ে করা হয় অর্থ লোপাট, কখনো আবার পাচার করা হয় বিদেশে।
পিগ বুচারিং নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এফবিআইয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পিগ বুচারিংয়ের শিকার হয়ে দেশটির মানুষ ৪২ কোটি ২৯ লাখ ডলার হারিয়েছেন। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যুক্তরাজ্যবাসী কত অর্থ হারিয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে দেশটির পুলিশের সাইবার অপরাধ ও প্রতারণা প্রতিরোধ শাখার হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের মানুষ পিগ বুচারিংয়ের শিকার হয়ে অর্থ হারানো ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
যেভাবে হয় প্রতারণা
পিগ বুচারিংয়ের শুরুটা চীনে। ২০১৯ সালের দিকে এই প্রতারণা দেশটিতে ব্যাপক হারে বেড়েছিল। পরে তা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পিগ বুচারিংয়ের সঙ্গে জড়িত প্রতারকেরা সাধারণত নিজেদের ধনী তরুণ–তরুণী হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁরা শিকার ধরেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ভাষা শেখার বিভিন্ন অ্যাপ, ডেটিং ওয়েবসাইট, একটি ‘ভুল নম্বরে’ খুদে বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে। এরপর শুরু হয় যোগাযোগ। আস্তে আস্তে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। কখনো তা গড়ায় ‘প্রেম–ভালোবাসাতেও’।
এটা প্রথম পর্যায়। এরপর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা ব্যক্তিকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে বলেন প্রতারক। অনেকে বিনিয়োগ করেন। প্রথম দিকে বিনিয়োগের লাভ দেওয়া হয়। এতে লোভ আরও বাড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা আরও বেশি বিনিয়োগ করেন। এভাবে চলতে চলতে প্রতারক যখন বুঝতে পারেন তিনি ‘শূকরকে’ খাবার খাইয়ে মোটাসোটা করে ফেলেছেন, তখনই সেটিকে ‘জবাই’ করা হয়। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করা সব অর্থ নিয়ে গায়েব হয়ে যান তিনি। পুরো প্রক্রিয়াই ঘটে অনলাইনে। প্রতারক কখনো সশরীর দেখা দেন না।
পিগ বুচারিংয়ের মাধ্যমে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে গত বছর একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক সংস্থা ‘প্রোপাবলিকা’। অনুসন্ধানে উঠে আসে চীনের অপরাধী চক্রগুলো পিগ বুচারিংয়ের মাধ্যমে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে চাকরির লোভ দেখিয়ে অনেককে বিদেশে পাচার করেছে।
এমনই একজন ভুক্তোভোগী যুক্তরাজ্যের স্যাম (ছদ্মনাম)। গত ডিসেম্বরে পিগ বুচারিংয়ের শিকার হয়ে ৫৪ হাজার পাউন্ড হারিয়েছেন ৪৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। এর মাসখানেক আগে ইনস্টাগ্রামে জেসিকা নামের এক চীনা নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।
দুজনের সম্পর্ক সামনের দিকে এগোয়। যথারীতি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেন স্যাম। তাঁর বক্তব্যটা এমন, ‘আমি লোভে পড়তে চাচ্ছিলাম না। আমি চাইছিলাম কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে বাড়তি আয় করতে।’
পরে জেসিকা আরও বিনিয়োগ করতে বলেন। এতে স্যামের মনে সন্দেহ জাগে। গুগল সার্চ করে তিনি দেখতে পান ইনস্টাগ্রামে জেসিকা যে ছবি ব্যবহার করেছেন, তা আসলে জাপানের একজন মডেলের। বিষয়টি খোলাখুলিভাবে জেসিকাকে জানান স্যাম। এরপর যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছিল। স্যামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জেসিকা। আর ইন্টারনেটে স্যাম দেখতে পান তাঁর বিনিয়োগ করা ৫৪ হাজার পাউন্ড হাওয়া হয়ে গেছে।
যাঁদের ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হচ্ছে, তাঁরাও কম ভোগান্তিতে নেই। তাঁদের একজন জিন লিন। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টন-সুপার-মারে শহরে তাঁর ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে জিওন গ্লোবাল লিমিটেডসহ ১৭টি সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান।
এখানেই শেষ নয়। পিগ বুচারিংয়ের মাধ্যমে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে গত বছর একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক সংস্থা ‘প্রোপাবলিকা’। অনুসন্ধানে উঠে আসে চীনের অপরাধী চক্রগুলো পিগ বুচারিংয়ের মাধ্যমে চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া থেকে চাকরির লোভ দেখিয়ে অনেককে বিদেশে পাচার করেছে। পাচারের পর অনেকের ঠাঁই হয়েছে কম্বোডিয়ার উপকূলীয় শহর সিহানৌকভিলে। সেখানে তাঁরা কাজ করতে না চাইলে খাবার না দেওয়া, মারধর ও বৈদ্যুতিক শকের মতো নানা উপায়ে নির্যাতন করা হয়। কম্বোডিয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ভিতিত মুন্তার্বহর্ন বলেছেন, এই নির্যাতন ‘নরকে বসবাসের’ মতো।
প্রতারকদের ঘাঁটি যুক্তরাজ্যে
যুক্তরাজ্যে পিগ বুচারিং প্রতারণার গভীরে যেতে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম অবজারভার এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক সংস্থা দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তাক লাগানো সব তথ্য। দেখা গেছে, এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অনেক চক্র যুক্তরাজ্যকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। এই প্রতরণাকে ব্যবসায়িক পর্যায়ে নিয়ে গেছে তারা। প্রতারণা করতে যুক্তরাজ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত আইনগুলোর ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছে তারা।
অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের ১৬৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণা বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় অর্ধেক পিগ বুচারিং প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত।
প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি বা দোকানের ঠিকানায় নিবন্ধন করা। অনেকগুলো আবার নিবন্ধন করা হয়েছে ইন্টারনেট ডোমেইন ঠিকানায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধন নিয়েছে, সেখানের সঙ্গে আদৌ তাদের কোনো সংযোগ নেই। আর ওই ঠিকানায় যেসব বাড়ি বা দোকান রয়েছে, সেগুলোর আসল মালিকদের তথ্যও বিস্তারিত দেয়নি তারা। অর্থাৎ ঠিকানাগুলো ভুয়া। প্রতারণা করতেই ইচ্ছা করে ভুল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। ভুল ঠিকানা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, তুরস্ক, জার্মানি ও পোলান্ডের মানুষের পকেট থেকে শত শত কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রয়োজন কী? আসলে যুক্তরাজ্যের মতো একটি উন্নত দেশে খোলা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে অনেকেই দ্বিধা করেন না। প্রতারকেরা এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে যুক্তরাজ্যের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যদি যুক্তরাজ্যে নিবন্ধন না নিত, তাহলে ভুলেও সেখান বিনিয়োগ করতেন না তাঁরা।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নতুন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে নিবন্ধন করতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট, খরচ হয় মাত্র ১২ পাউন্ড। নিবন্ধনের জন্য প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয় না কোনো পরিচয়পত্র।
এমনই একজন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী। যুক্তরাজ্যে নিবন্ধন নেওয়া জিওন গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ডলার খুইয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের নিবন্ধন দেখেই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বাস করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি মনে করবেন আপনার অর্থ নিয়ে পালিয়ে গেলে, আপনি তাদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে কিছু একটা করতে পারবেন। কিন্তু ওই ঠিকানাই তো ভুয়া।’
এদিকে যাঁদের ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হচ্ছে, তাঁরাও কম ভোগান্তিতে নেই। তাঁদের একজন জিন লিন। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টন-সুপার-মারে শহরে তাঁর ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে জিওন গ্লোবাল লিমিটেডসহ ১৭টি সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান। জিন লিন বলেন, তাঁর ঠিকানা ব্যবহার করার অনুমতি নেয়নি কেউ। এমনকি এর পেছনে কারা আছেন তা-ও জানেন না। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো শত শত চিঠি তাঁর ঠিকানায় এসেছে। এখনো আসছে।
যুক্তরাজ্যের আরেকজনের ঠিকানায় নাকি এমন চার থেকে পাঁচ হাজার চিঠি এসেছে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, অনেক চিঠি তিনি প্রমাণ হিসেবে রেখে দিয়েছেন, যেন ভবিষ্যতে তাঁকে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়। মাঝেমধ্যে নাকি অপরিচিত লোকজন তাঁর ঠিকানায় এসে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করেন। এ নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে আছেন তিনি। বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, তিনি বাইরে থাকার সময় কেউ আসলে দরজা না খুলতে।
কথা উঠতে পারে যুক্তরাজ্যের নিবন্ধন নেওয়া এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কি দেশটির সরকারের নজরে আসেনি? হ্যাঁ এসেছে। এমন অনেক ঘটনার বিষয়ে জানে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে তাদের থামাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম ব্যারো বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমরা অর্থসংক্রান্ত যেসব প্রতারণা দেখেছি, সেগুলোর মধ্যে পিগ বুচারিং বড় একটি প্রতারণা। এই প্রতারণা থামাতে যুক্তরাজ্য সরকার কিছুই করেনি। এটা তাদের বড় একটি ব্যর্থতা।’
‘কেন প্রতারকেরা অন্য দেশে ঘাঁটি গাড়বে’
সারা বিশ্বজুড়েই ক্রিপ্টোকারেন্সি–সংক্রান্ত অপরাধগুলো নির্মূল করতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এ–সংক্রান্ত প্রতারণাগুলো সামাল দিতে নতুন একটি শাখা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি। আর ইন্টারপোল সম্প্রতি আর্থিক অপরাধ ও দুর্নীতিবিরোধী শাখা চালু করেছে।
তবে যুক্তরাজ্যের অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রতারকদের ধরপাকড়ের মধ্য দিয়েই শুধু সমস্যার সমাধান হবে না। যুক্তরাজ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন প্রক্রিয়া যত দিন আরও শক্ত না করা হবে, তত দিন সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলো এ ধরনের প্রতারণার জন্য যুক্তরাজ্যকে ব্যবহার করে যাবে।
পিগ বুচারিং প্রতারণার বিচার পেতেও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে অস্পষ্টতার কারণে এ–সংক্রান্ত প্রতারণার পর অর্থ ফিরিয়ে আনতে বড় বাধার মুখে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। অবজারভার ও দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের সঙ্গে যেসব ভুক্তোভোগীর কথা হয়েছে তাঁদের ভাষ্যমতে, প্রতারণার বিষয়টি তাঁরা নিজ দেশ ও যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নানা আর্থিক কর্তৃপক্ষ ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের কাছে জানিয়েছিলেন। তবে কেউ অর্থ ফেরত এনে দিতে পারেনি।
যুক্তরাজ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা সংস্থা কোম্পানিস হাউস গত সপ্তাহে একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যে প্রতারণা হচ্ছে, সে বিষয়ে অবগত আছে। আর অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছে—এ বিষয়টিও জানে। এ–সংক্রান্ত কোনো অপরাধ সামনে এলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নতুন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে নিবন্ধন করতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট, খরচ হয় মাত্র ১২ পাউন্ড। নিবন্ধনের জন্য প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয় না কোনো পরিচয়পত্র। সরকার অবশ্য এই আইন আরও কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আগে সে বিষয়ে সরবরাহ করা নানা তথ্য যাচাই করে দেখা হবে। যদিও এ–সংক্রান্ত বিলটি এখনো পার্লামেন্টে তোলা হয়নি, আর হলেও তা অনুমোদন পেয়ে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম ব্যারোও কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আগের তথ্য যাচাইয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, এর আগপর্যন্ত যুক্তরাজ্য হবে সহজে ও সস্তায় ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আদর্শ একটি দেশ। এই সুযোগ বাদ দিয়ে কেন প্রতারকেরা অন্য কোনো দেশে গিয়ে ঘাঁটি গাড়বে?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র গার্ডিয়ান অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন শেখ নিয়ামত উল্লাহ