রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও বন্ধ হয়নি হামলা

বছরজুড়ে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধই ছিল বড় খবরছবি: এএফপি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রথমবারের মতো কোনো পক্ষ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর মধ্যেও চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। আজ শুক্রবার থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের বড়দিন উপলক্ষে ৩৬ ঘণ্টার এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে একে রাশিয়ার ‘ভণ্ডামি’ বলে উল্লেখ করেছে ইউক্রেন। যুদ্ধবিরতি ঘিরে কিয়েভের সুরে কথা বলছে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোও।

পুতিন সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগে ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় রুশ সেনারা। ইউক্রেন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রায় চার শ রুশ সেনা হত্যার দাবি করে। তবে রাশিয়া স্বীকার করে, ওই হামলায় তাদের ৮৯ সেনাসদস্য নিহত হন। সর্বশেষ আরও সাঁজোয়া যান ও প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করে কিয়েভের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার আধ্যাত্মিক নেতা প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতির জন্য রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল দিনের মাঝামাঝি থেকে আজ শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ যুদ্ধবিরতি বলবৎ থাকবে।

তবে মস্কোর পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা মানতে নারাজ ইউক্রেন। একে পুতিনের ‘ভণ্ডামি’ আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এক টুইটবার্তায় বলেন, ইউক্রেনে দখল করা এলাকাগুলো থেকে রুশ সেনাদের অবশ্যই সরে যেতে হবে। এরপরই শুধু যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিয়েভের মতো একই মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তিনি বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর (বড়দিন) ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষের দিনেও ইউক্রেনের হাসপাতাল ও গির্জাগুলোর ওপর বোমা হামলা চালাতে তৈরি ছিলেন পুতিন। আমার মনে হয়, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি নিশ্বাস নেওয়ার বিরতি খুঁজছেন।’
আর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেন, ‘রাশিয়ার হামলায় ৩৬ ঘণ্টার বিরতি শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো কাজেই আসবে না।’

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলা
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও রাশিয়া হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপপ্রধান কিরিলো তিমোশেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লিখেছেন, গতকাল পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামাত্রোস্ক শহরে দুবার রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে একটি আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

উল্টো কথা বলছে মস্কো। গতকাল তারা দাবি করেছে, পুতিনের নির্দেশ মেনে যুদ্ধবিরতি ঠিকঠাকভাবেই পালন করা হচ্ছে। ইউক্রেনীয়রাই বরং তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি পোস্টে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘৬ জানুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রুশ সেনারা মেনে চললেও কিয়েভ বিভিন্ন জনসমাবেশ কেন্দ্র ও রুশ সেনাদের অবস্থানে গোলা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’

যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইউক্রেন বাহিনী লুহানস্ক, দোনেৎস্ক ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের লিমান শহরে রুশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে চারটি মর্টার ছুড়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

আরও অস্ত্র পাচ্ছে ইউক্রেন
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগেই ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দিয়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ওয়াশিংটন ও বার্লিন। সেখানে বলা হয়েছে, তারা কিয়েভকে ‘ব্রাডলি’ ও ‘মার্ডার’ সাঁজোয়া যান সরবরাহ করবে। এ ছাড়া আগে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার দ্বিগুণ প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সে দেশে পাঠানো হবে।

এ ছাড়া গত বুধবার ইউক্রেনকে নিজেদের তৈরি ‘এএমএক্স-১০ আরসি’ ট্যাংক সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম এ ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনীয়দের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। মাখোঁর ওই ঘোষণার পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজকে তাদের ‘লেপার্ড’ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বেশ আগে থেকেই এ ট্যাংক পেতে জার্মানির কাছে আরজি জানিয়ে আসছিল কিয়েভ।