রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞায় কি নিজেই বিপদে পড়ছে ইইউ

সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল আমদানিতে ইইউ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দর অনেক বেশি বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে
রয়টার্স ফাইল ছবি

সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার পেছনে এটিকে একটি কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দ্য ইকোনমিস্টের এমন একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে রুশ বার্তা সংস্থা আরটির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

সমুদ্রপথে রাশিয়ার আমদানি করা তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ৬০ ডলার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেলের দাম বাড়লে পশ্চিমা ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব বজায় রাখতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হবে পশ্চিমারা।

আরটির প্রতিবেদনে এই দাম বেঁধে দেওয়াকে জ্বালানির বাজারে শক্তিশালী ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তেলের ট্যাংকারগুলোর ৯৫ শতাংশ ইনস্যুরেন্স যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিয়ার তেল বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি পশ্চিমাদের একটি কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

যদি রাশিয়ার তেল বাজারে জায়গা করে নিতে না পারে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পশ্চিমা ভোক্তারা।

ইকোনমিস্টের খবর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ শুরু থেকেই রাশিয়ার তেলের বাজার নিয়ে ছক কষছে। ইউরোপীয় সংস্থাগুলোকে সুবিধা দিতে পশ্চিমারা রাশিয়াকে তেল কেনাবেচায় দর বেঁধে দিয়েছে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বলছে, পশ্চিমাদের তেলের দর বেঁধে দেওয়ায় রাশিয়া কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর বেঁধে দেওয়ায় ক্রেমলিন তেল রপ্তানি কমিয়ে আনতে পারে। যারা পশ্চিমা নয়, সেসব ট্যাংকার ও ইনস্যুরারদের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে পারে। এতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে।

আরেকটি অনিশ্চয়তা হলো, বৈশ্বিক তেলের বাজারে পশ্চিমারা কতটা প্রভাব বজায় রাখবে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বলছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ এড়িয়ে চলতে চায়। এই দেশগুলো প্রতিনিয়ত ইনস্যুরেন্সের বিকল্প উৎসগুলো খুঁজছে। কারণ, ছয় মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়। আর নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময় এখনো আছে।

ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পর তেলের বাজার কতটা ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে, তা ৫ ডিসেম্বরের পরের কয়েক দিনে বোঝা যাবে। কারণ, এ সময়ে তেলের দাম অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।

এ ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমাদের ব্যাংকিং–ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শক্তিশালী করেছে। এতে পশ্চিমাদের জ্বালানি অবকাঠামো এড়িয়ে গিয়ে চীন ও ভারত নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে।

আরও পড়ুন

সোমবার থেকে বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার তেল সরবরাহে নিযুক্ত জাহাজগুলোর বিমা ও অর্থায়নকারী ইইউর কোম্পানিগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত রাশিয়ার তেলের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা নেই।

আল–জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্যানুযায়ী, রাশিয়া থেকে ইইউ দিনে ২২ লাখ ব্যারেল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন সাত লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হয়। পাশাপাশি দিনে ১২ লাখ ব্যারেল পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যও সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আইইএ আরও বলেছে, প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং ১১ লাখ ব্যারেল জ্বালানি পণ্যের জন্য ইইউকে এখন বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন

ওই প্রতিবেদনে ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি নীতিমালাবিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপ লসবার্গ একই রকমের কথাই বলেছেন। তিনি মনে করেন, তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে তেলের মূল্যের ওপর। তেলের দাম বেড়ে যাবে। যেদিন রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়, সেদিনই বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য দুই শতাংশ বেড়েছে।