ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করছে জার্মানি। দেশটির একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। আগামীকাল সোমবার বার্লিনে ইউরোপীয় নেতারা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শীর্ষ সম্মেলনের আগে এই বৈঠক হবে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে জার্মানির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া উইটকফকে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে এখন অগ্রগতির একটি সুযোগ দেখতে পাচ্ছে ওয়াশিংটন।
গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেই কেবল ট্রাম্প কোনো কর্মকর্তাকে আলোচনার জন্য পাঠাবেন।
‘প্যাক্স আমেরিকানা’ যুগ শেষ
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জার্মান সরকারের একটি সূত্র গতকাল শনিবার বলেছে, ‘এই সপ্তাহান্তে বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টাদের নিয়ে ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’
সোমবার বার্লিনে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস। ইউরোপজুড়ে মিত্রদের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের নেতার প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের অংশ হিসেবে এ সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে একটি শান্তি পরিকল্পনায় সই করার জন্য কিয়েভ চাপের মুখে রয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রাথমিকভাবে মস্কোর প্রধান দাবিগুলোকে সমর্থন করা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি মার্কিন প্রস্তাবগুলো পরিমার্জনের জন্য কাজ করছে। গত মাসে ওই প্রস্তাবের একটি খসড়া ফাঁস হয়। এতে কিয়েভকে আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ এবং নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছিল।
শনিবার এক ভাষণে মের্ৎস বলেন, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আমূল পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিউনিখে দলীয় এক সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘ইউরোপে আমাদের জন্য এবং একইভাবে জার্মানির জন্যও প্যাক্স আমেরিকানা (পশ্চিমে মার্কিনসমর্থিত স্থিতিশীলতা) যুগ বহুলাংশে শেষ হয়ে গেছে। আমরা যেমনটা জানতাম, সেভাবে এর আর অস্তিত্ব নেই। আর স্মৃতিকাতরতা এই বাস্তবতা বদলাতে পারবে না।’
ইউরোপের প্রভাবশালী দেশটির এই নেতা বলেন, ‘মার্কিনিরা এখন আরও বেশি প্রবলভাবে তাঁদের নিজস্ব স্বার্থের পেছনে ছুটছে। আর এর মানে একটাই হতে পারে—এখন আমাদেরকেও অবশ্যই নিজেদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।’