মন্ত্রিসভায় রদবদল করে নতুন কী ছক কষছেন পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন, সের্গেই শোইগু ও আন্দ্রেই বেলুসভফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল আনলেন।

১২ বছর ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সের্গেই শোইগু। তাঁকে আকস্মিকভাবে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন পুতিন।

রুশ প্রেসিডেন্ট তাঁর নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেই বেলুসভকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শোইগুকে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পদে ২০০৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নিকোলাই পাস্তুরেভ।

আরও পড়ুন

ক্রেমলিনের দিকে নজর রাখা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে পুতিনের এই পদক্ষেপ নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। এই রদবদলের অর্থ দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা।

পুতিনের অনুগত হিসেবে পরিচিত শোইগু। পুতিন-শোইগুর মধ্যে যে দহরম-মহরম সম্পর্ক আছে, তার প্রমাণ দুজনের অনেক ছবিতে দেখা যায়। পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেন আক্রমণে রুশ সশস্ত্র বাহিনীকে এত দিন শোইগুই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এখন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে শোইগুর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বেলুসভ। তাঁর নিয়োগ চলতি সপ্তাহেই রুশ পার্লামেন্টে অনুমোদন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে বেলুসভের নিয়োগের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেছেন, যিনি উদ্ভাবনের ব্যাপারে আরও আন্তরিক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা বাস্তবায়নে যিনি আরও আন্তরিক, তিনিই যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ী হন। এটা স্বাভাবিক যে বর্তমান পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একজন বেসামরিক ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া দরকার।

আরও পড়ুন

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, পুতিনের এই রদবদল একটি ইঙ্গিত দেয়; আর তা হলো ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার কোনো পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই।

পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধ এখনো চলছে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক ইতিহাস বিভাগের অতিথি শিক্ষক জেফ হ্যান বলেন, রদবদলটি ইঙ্গিত দেয় যে ইউক্রেন থেকে সরে আসতে চাইছে না ক্রেমলিন; বরং তারা যতটা সম্ভব লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে না থাকলেও শোইগু সামরিক খাতে কিছু দায়িত্ব পালন করবেন বলে ক্রেমলিন ইতিমধ্যে জানিয়েছে। শোইগু শিগগির রাশিয়ার মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিশনের ডেপুটি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। তিনি দেশটির ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি-টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের (এফএসভিটিএস) প্রধানও হবেন। সংস্থাটি অন্যান্য দেশের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার দিকটি দেখভাল করে।

আরও পড়ুন

পুতিন ও রাশিয়ার ওপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন মার্ক গ্যালিওটি। তাঁর মতে, একজন অর্থনীতিবিদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন। আর এত দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা একজন সামরিক ব্যক্তি একটি নীতি ও উপদেষ্টামূলক ভূমিকায় যাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁরা টেকনোক্র্যাট হিসেবে কাজ করবেন। যদিও এই রদবদলের লক্ষ্য শান্তি নয়, বরং আরও কার্যকরভাবে যুদ্ধ চালানো।

মার্ক গ্যালিওটি বলেন, রুশ সরকারের এখনকার নীতি-সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান। পুতিন জানেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর টেকনোক্র্যাট লোক দরকার।

পুতিনের জারি করা আদেশে এফএসভিটিএসকে আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন রাখা হয়নি। যার অর্থ, শোইগুকে শুধু পুতিনের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে।

এই রদবদলে পাস্তুরেভ সবচেয়ে বেশি ক্ষতগ্রস্ত হয়েছেন বলে আপাতত মনে হচ্ছে। ইউক্রেন রুশ আক্রমণের পেছনে মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের একজন ছিলেন তিনি। এখন তাঁকে কোথায় কোন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্যেষ্ঠ ফেলো আন্দ্রেই কোলেসনিকভ বলেন, পুতিনের সবচেয়ে চমকপ্রদ নিয়োগের একটি হলো প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতিবিদ বেলুসভের নিযুক্তি। যুদ্ধে বরাদ্দ বিপুল অর্থ যাতে চুরি না হয়, তা নিশ্চিত করা পুতিনের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বেলুসভ শুধু দারুণ কাজই করেন না, রাশিয়ার অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।