ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ আরও কমছে

জার্মানিতে রাশিয়া থেকে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম বলেছে, তারা আবারও তাদের প্রধান সরবরাহ লাইন দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখবে। সরবরাহ লাইনের মেরামতকাজের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

নর্ড স্ট্রিম ওয়ান সরবরাহ লাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে সক্ষমতার তুলনায় কম গ্যাসপ্রবাহ ছিল। চলতি মাসের শুরুর দিকে রক্ষণাবেক্ষণকাজের জন্য এটি ১০ দিন বন্ধ রাখা হয়। এবার আবারও সে সরবরাহ লাইন বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গাজপ্রম বলছে, সরবরাহ লাইনে চালু থাকা সর্বশেষ দুটি টারবাইনের একটিতে ‘কারিগরি সংকট’ থাকার কারণে আন্তর্জাতিক মান সময় কাল বুধবার বিকেল চারটা থেকে গ্যাস সরবরাহ কমা শুরু হতে পারে।

নর্ড স্ট্রিম ওয়ান সরবরাহ লাইনের আরও একটি টারবাইন বন্ধ করার কারণে দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ২০ শতাংশ কমে যাবে বলে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি। অর্থাৎ ইউরোপে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ হয়, তার অর্ধেক পরিমাণ উৎপাদন কমে যাবে। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করেছে রাশিয়া।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে শীতকালের আগে গ্যাস মজুতকেন্দ্রগুলো ভরপুর রাখাটা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। শীতকালে এসব দেশে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি হয়ে থাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিযোগ, রাশিয়া জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জার্মান সরকার বলছে, গ্যাস সরবরাহ সীমিত রাখার ক্ষেত্রে কারিগরি কোনো কারণ নেই।

জার্মানির অর্থমন্ত্রীর মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা যেমনটা জানতে পেরেছি, তাতে সরবরাহ কমার কারিগরি কোনো কারণ নেই।’

তবে রাশিয়া বলছে, তারা নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সহযোগী। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে দেশটি।

আগামী ৭ মাসে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমাতে বিভিন্ন দেশকে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। সরবরাহ কমানো কিংবা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে রাশিয়ার হুঁশিয়ারির পর এ আহ্বান জানানো হয়।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় রাশিয়ার সব সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়াটা এখন বাস্তব সম্ভাবনা।

স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানিমন্ত্রীদের বৈঠক করার কথা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর গ্যাসের পাইকারি দাম বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাব পড়েছে ভোক্তাদের জ্বালানি বিলের ওপরও।

গাজপ্রমের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য গ্যাসযুদ্ধ চালাচ্ছে রাশিয়া। যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ঠিক তেমনটাই ঘটছে।

গাজপ্রম বলছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে কানাডায় সংস্কার করা যন্ত্রপাতি ফেরত পেতে দেরি হয়েছে। আর তাতে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান সরবরাহ লাইন দিয়ে মোট সক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করতে পেরেছে তারা।

গাজপ্রমের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্সি মিলার বলেন, ‘পণ্যও আমাদের, বিধিও আমাদের। যে বিধি আমাদের নয়, তা আমরা অনুসরণ করি না।’ রাশিয়ার শর্ত না মানায় ইতিমধ্যে বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডে একযোগে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে গাজপ্রম। রাশিয়া বলেছিল, তাদের বিল ইউরো কিংবা ডলারের বদলে রুবলে পরিশোধ করতে হবে। তা মানতে রাজি না হওয়ায় এ দেশগুলোর বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।