দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন লাইভে যুদ্ধের বিরোধিতাকারী সেই রুশ সাংবাদিক

মেরিনা ওভিসইয়াননিকোভা
এএফপি ফাইল ছবি

রাশিয়ায় টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের সময় যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির হওয়া সেই আলোচিত সাংবাদিক মেরিনা ওভিসইয়াননিকোভা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গর্ত মার্চে রাশিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’-এ সন্ধ্যার খবর প্রচারের সময় তিনি সংবাদ পাঠিকার পেছনে যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল ‘যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ বন্ধ করো, প্রচারণায় বিশ্বাস কোরো না, তারা এখানে মিথ্যা কথা বলছে’।

মেরিনার আইনজীবী দিমিত্রি জাখভাতভ এএফপিকে বলেন, মেরিনা যে বাড়িতে গৃহবন্দী ছিলেন, সেখান থেকে বের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়েন। এখন তাঁরা ইউরোপে। তাঁরা ভালো আছেন। যত দিন পর্যন্ত না তাঁরা   প্রকাশ্যে কথা বলতে পারবেন, তত দিন পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন, এটি আপাতত তাঁদের জন্য নিরাপদ নয়।

গত মার্চে মেরিনা চ্যানেল ওয়ানের সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনার পর তাঁকে আটক করা হয়। পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীর মর্যাদাহানির অভিযোগ এনে তাঁকে ৩০ হাজার রুবল জরিমানা করা হয়।ক্রেমলিন তাঁর এই প্রতিবাদকে ‘গুন্ডামি’ বলে অভিহিত করেছেন। সে সময় ফ্রান্স সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে চাইলেও তিনি দেশ ছাড়তে রাজি হননি।

এ ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দেন মেরিনা। হয়ে ওঠেন অধিকারকর্মী। অধিকারকর্মী হিসেবে মেরিনা প্রকাশ্যে যুদ্ধের বিরোধিতা শুরু করেন।

আরও পড়ুন

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি ক্রেমলিনের কাছে পোস্টার হাতে বিক্ষোভ করেছিলেন মেরিনা। সেই পোস্টারে লেখা ছিল ‘পুতিন একজন খুনি। তাঁর সৈন্যরা ফ্যাসিস্ট’। এরপর আগস্টের শুরুর দিকে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে রুশ কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত আগস্টে তাঁকে দুই মাসের জন্য গৃহবন্দী করা হয়। ৯ অক্টোবর এ সাজার মেয়াদ শেষ হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারত।

মেরিনার আইনজীবী দিমিত্রি জাখভাতভ জানান, আজ ১৭ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে মস্কোর একটি জেলা আদালতে তাঁর বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তিনি কোথায়, তা জানাতে পারেনি।

গত ৫ অক্টোবর মেরিনা টেলিগ্রামে এক পোস্টে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে করে লিখেন, ‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি। যেহেতু রাষ্ট্রই তার নিজস্ব আইন মেনে চলে না, তাই আমি চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে আমার ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ মানব না এবং আমি এ থেকে নিজেকে মুক্ত করছি।’

রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রাশিয়া টুডে গত শনিবার জানায়, মেরিনা তাঁর ১১ বছরের মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছেন। এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।

কীভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন এবং কোথায় গেলেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে আজ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা পলাতক আসামিদের তালিকায় মেরিনার নাম-ছবিসহ দেখা গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মেরিনার আইনজীবী রয়টার্সকে বলেন, মেরিনা মেয়েকে নিয়ে গেলেও তাঁর ছেলে এখনো দেশেই আছে। তিনি কোন দেশে গিয়েছেন সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। বলেন, ‘খুব শিগগিরই সব জানা যাবে। এ জন্য আমাদের কিছু সময় প্রয়োজন।’

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের আট দিন পর ৪ মার্চ একটি নতুন আইন পাস করে। সেখানে বলা হয় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর কেউ মর্যাদাহানি করলে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।