যুদ্ধের মাঠে ন্যাটোর ট্যাংক দিয়ে কী লাভ হবে ইউক্রেনের

জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ যুদ্ধট্যাংক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ন্যাটোর সদস্যদেশগুলো থেকে ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে এ সপ্তাহে সরগরম গণমাধ্যম। রাশিয়ার হামলার শুরু থেকেই পশ্চিমাদের কাছে এসব অস্ত্র চাইছে কিয়েভ। যুদ্ধের ১১তম মাসে এসে এই চাওয়া মিটছে বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র তাদের থার্টি ওয়ান আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল বুধবার তড়িঘড়ি করে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এসব ট্যাংক ব্যবহারের প্রক্রিয়া জটিল। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংকগুলো কার্যকর রাখতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সরবরাহ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার দিনেই জার্মানির সরকারও নিজেদের মজুত থেকে লেপার্ড টুএসিক্স ট্যাংক পাঠাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। পোল্যান্ডের মতো অন্য দেশকেও জার্মানি তাদের তৈরি সরঞ্জাম ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। ১৪ জানুয়ারি লন্ডন চ্যালেঞ্জার্স টু কিয়েভে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে প্যারিসও এএমএক্স-ফিফটি সিক্স লিক্লার্ক সরঞ্জাম ইউক্রেনে পাঠাবে।

এত সব উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের তুলনায় রাশিয়ার টি-নাইনটিস ট্যাংকের সক্ষমতা নিয়ে রুশ বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে।

তবে রুশ বার্তা সংস্থা আরটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন শেষে যুদ্ধের ময়দানে এসব অস্ত্র কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটিই আসল প্রশ্ন। মনে রাখার মতো আরেকটি বিষয় হলো, আধুনিক ট্যাংক প্রতিরোধব্যবস্থার কাছে সব ট্যাংকই অরক্ষিত। কতগুলো ট্যাংক কিয়েভের দরকার সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

কিয়েভে কত ট্যাংক প্রয়োজন

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে সাঁজোয়া বাহিনীর কাছে ২৯৬ ট্যাংক, ২৩০ পদাতিক যান, ৫৪ স্ব-চালিত আর্টিলারি ব্যবস্থা, ২০০০–এর বেশি নিয়মিত যান ও ১২ হাজার সেনা ও সেনা কর্মকর্তা থাকা প্রয়োজন।

প্রশ্ন হলো, কিয়েভের কটি সাঁজোয়া বাহিনী প্রয়োজন? লুহানস্ক, দোনেৎস্ক ও জাপোরিঝঝিয়া তিনটি সম্মুখসমরস্থলে কমপক্ষে একটি করে সাঁজোয়া বাহিনী থাকা দরকার।

তিন সাঁজোয়া বাহিনীতে ৯০০ ট্যাংক থাকতে হবে। আবার শুধু এই তিন সমরস্থলই নয়, বেলারুশিয়ান সম্মুখসমরস্থলে আরেকটি সাঁজোয়া বাহিনী প্রয়োজন। কারণ, এখানেও জোর লড়াই চলছে। আর সে কারণে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত বেশি ট্যাংক থাকা দরকার।

শুধু ট্যাংক হলেই হবে না। হামলার সময় ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। একটি সাঁজোয়া বাহিনীর গড় দৈনিক ক্ষতি হতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ট্যাংক অমেরামতযোগ্য হয়ে যেতে পারে। কিছু ট্যাংকের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মেরামত প্রয়োজন হতে পারে। মাঝারি পাল্লার কিছু ট্যাংকের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ এবং গড়পড়তা ১০ থেকে ২০ শতাংশ মেরামত প্রয়োজন হতে পারে।

সহজ কথায় যুদ্ধের সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা সামাল দিতে আরও ৩০০ ট্যাংক প্রয়োজন। অর্থাৎ, ইউক্রেনের দরকার কমপক্ষে ১ হাজার ৮০০ ট্যাংক।

কিয়েভ কত ট্যাংক পাবে

ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য কয়েক ডজন ট্যাংক পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। গ্রেট ব্রিটেন ও পোল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সাঁজোয়া প্রতিষ্ঠানকে ১৪টি ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানিও একই পরিমাণ ট্যাংক দেবে বলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ৩১ আব্রামস সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এবিসির এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরটি জানিয়েছে, জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রুপের বৈঠকে ১২টি দেশের কর্মকর্তারা কিয়েভে প্রায় ১০০টি ট্যাংক পাঠানো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জার্মানির অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেইনমেটাল ইউক্রেনে ১৩৯ ট্যাংক সরবরাহ করবে। এর মধ্যে ৮৮টি লেপার্ড ওয়ানস ও ৫১টি লেপার্ড টুএফোরস থাকবে। রেইনমেটাল বলছে এ বছর গরমের আগে মাত্র ২৯টি ট্যাংক সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

ট্যাংক দিয়ে কী হবে

আরটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অদক্ষ ক্রু এসব ট্যাংক পরিচালনা করার কারণে ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে। তাই মার্কিন ট্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য ক্রুদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ট্যাংক মেরামতকারী ইউনিট, স্থানান্তরকারী দলকে ট্যাংক পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

কৌশলগত স্তরে সাফল্য পেতে হলে ইউক্রেনের বাহিনীতে অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ মার্কিন ট্যাংক থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া এমওয়ান আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে সরবরাহ করলে সামরিক অথবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য আসা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া এ পর্যন্ত শক্র সরঞ্জাম মোকাবিলায় রাশিয়ার কোনো সমস্যা হয়নি। এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেশির ভাগ পশ্চিমা বিশ্লেষক একমত হয়েছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেনেন্ট জেনারেল ইগোর কোনাশেনকভ বলেছেন, সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ বাহিনী ৩৭৬ বিমান, ২০৩ হেলিকপ্টার, ২ হাজার ৯৪৪ ইউএভিএ, ৪০২ বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, ৯৮৮ এমএলআরভি এবং ৩ হাজার ৮৯৮ আর্টিলারি বন্দুক ও মর্টার ধ্বংস করেছে। সেই সঙ্গে ৭ হাজার ৬১৪ ট্যাংক ও অন্যান্য সশস্ত্র যান ধ্বংস করেছে।

আরও পড়ুন

আত্মতুষ্টির উপায় নেই

ন্যাটোর প্রথম ট্যাংক কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেবে। পোল্যান্ড প্রাথমিকভাবে জার্মান ও আমেরিকান ট্যাংকগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সেবা দেবে। তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফলে যুদ্ধের ময়দানে এসব ট্যাংক ব্যবহারে কিয়েভ খুব বেশি সাফল্য পাবে না বলছে রাশিয়া।

আরও পড়ুন