প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিশোরীকে ধর্ষণ, ১৩ বছর পর পুলিশ কর্মকর্তার সাজা

অ্যাডাম প্রোভান
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

যুক্তরাজ্যের নারী লরেন টেইলর ২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। তাঁর সঙ্গে ডেট করার কথা বলে দ্বিগুণ বয়সী অ্যাডাম প্রোভান তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই সময় লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন প্রোভান। বয়স নিয়ে লরেনকে মিথ্যা বলে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন তাঁর বয়স ২২ বছর।

লরেনকে প্রোভান বলেছিলেন, প্রথম দেখার দিনে তাঁকে তিনি সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবেন। তার আগে পূর্ব লন্ডনের রমফোর্ডে একটি পার্কে হাঁটাহাঁটি করবেন। তবে লরেনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁকে একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন প্রোভান।

লরেন বলেছেন, ধর্ষণের পর প্রোভান এমন আচরণ করছিলেন যেন কিছুই হয়নি। তাঁকে মিল্কশেক কিনে দিয়েছিলেন। এরপর আবারও ধর্ষণ করেন।

ঘটনার এক দশকেরও বেশি সময় পর গতকাল মঙ্গলবার প্রোভানকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন উড গ্রিন ক্রাউন আদালত। লরেনকে দুই দফায় ধর্ষণ এবং আরও এক নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ছয় দফা ধর্ষণের দায়ে প্রোভানকে আরও আট বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তার বয়স এখন ৪৪ বছর।

তবে প্রোভানের সাজা নিশ্চিত করার যাত্রাটা লরেনের জন্য সহজ ছিল না। আদালতে তিন দফায় বিচার চলার পর এ রায় এসেছে।

ধর্ষণের ঘটনার দিনের কথা স্মরণ করে লরেন বলেন, ‘আমি আতঙ্কে হিম হয়ে পড়েছিলাম। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরি। শুধু মনকে বোঝাতে চাইছিলাম, আমি সেখানে যাইনি। শুধু মনে মনে বলছিলাম, এটা আমি ছিলাম না। আমার সঙ্গে এমনটা ঘটেনি।’

পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন লরেন। পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে তাঁর ছয় বছর সময় লেগে গিয়েছিল।

প্রোভানের বিরুদ্ধে তিন দফায় বিচারকাজ চালানো হয়েছে। প্রোভানের বিরুদ্ধে প্রথম বিচারকাজ চলার সময় তাঁকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে জুরিরা একমত হতে পারেননি। বিনা নিষ্পত্তিতে সে বিচারকাজ শেষ হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বিচার শুরু হয়।

তখন তাঁকে দুই দফা ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে আপিল আবেদনের পর সে সাজা খারিজ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে চাকরিচ্যুত হন প্রোভান।

এরপর প্রোভানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন আরও এক নারী। তিনিও মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা। অধস্তন এ নারী কর্মকর্তাকেও ধর্ষণ করেছিলেন প্রোভান। ওই নারী কর্মকর্তা লরেনের জবানবন্দি শুনেছিলেন। তিনি বলেন, লরেনের ঘটনার কয়েক বছর আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।

লরেনের বয়স এখন ২৯ বছর। যৌন নিপীড়নের এ ঘটনায় তিনি চাইলে নাম গোপন রাখতে পারতেন। তবে লরেন বলেছেন, এ ধরনের নিপীড়নের শিকার মানুষেরা যেন তাঁদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতেই তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করেছেন।

প্রোভানের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ যদি ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করত, তাহলে পরবর্তী ধর্ষণের ঘটনাটি আর ঘটত না।