জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত পুতিনের

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (বাঁয়ে) ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফ্রান্সের প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ফাইল ছবি: এপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিন বছর আগে যুদ্ধের শুরুর দিকেই কেবল এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা ছিল। পরে যুদ্ধের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়।

গতকাল সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘শান্তি আলোচনার যেকোনো পদক্ষেপকে রাশিয়া সব সময় ইতিবাচকভাবে দেখে। আমাদের আশা, ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও একই ধরনের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন।’

পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন যে সরাসরি আলোচনা করতে চান, সেটার অর্থ এই নয় যে দেশটির বেসামরিক নিশানায় হামলা চালানো বন্ধ করা হবে।

পুতিনের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি জেলেনস্কি। তবে সোমবার রাতে নিয়মিত ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইউক্রেন ‘যেকোনো ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত’। কিন্তু তাতে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দু-একটি দেশে সরাসরি ও অনলাইনে কয়েক দফা আলোচনা হয়। যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণা করলে তা বন্ধ হয়ে যায়।

পুতিনের মন্তব্যের পর ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাকে পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলেছেন বেসামরিক নিশানায় হামলা না চালানোর বিষয়েও আলোচনা সম্ভব। এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে হতে পারে। এর অর্থ হলো ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দর-কষাকষিসহ সার্বিক আলোচনার প্রসঙ্গ মাথায় রেখে তিনি কথা বলেছেন।’

ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, বেসামরিক অবকাঠামোয় হামলা চালাতে রাশিয়া রাজি হবে কি না, সে বিষয়ে ‘মস্কোর পক্ষ থেকে স্পষ্ট উত্তর’ চায় ইউক্রেন।

এর আগে ইস্টার সানডেতে ঘোষিত পুতিনের স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এমন যুদ্ধবিরতি, যাতে অন্তত ৩০ দিনের জন্য দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক অবকাঠামোতে সব ধরনের হামলা বন্ধ করা হবে।’

আরও পড়ুন

জেলেনস্কির ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রসঙ্গে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারণাটি আমরা “বিশ্লেষণ” করে দেখব। বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে...তা সুনির্দিষ্ট করা দরকার।’

সাংবাদিকদের কাছে পুতিন চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব দিকের শহর সুমির মধ্যাঞ্চলের একটি বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এ ধরনের স্বীকারোক্তি দুর্লভ। রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হন।

পুতিন বলেন, ‘একটি কংগ্রেস হলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার বিষয়টি সবাই আপনারা জানেন। সুমি অঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়েছে। এটি একটি বেসামরিক অবকাঠামো, নয় কি? হ্যাঁ, এটি বেসামরিক অবকাঠামো। কিন্তু সেখানে [রাশিয়ার] কুরস্ক অঞ্চলে যারা অপরাধ করেছিল, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ফাইল ছবি : রয়টার্স

সুমির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হামলার দিনটি ছিল পাম সানডে, যা খ্রিষ্টানদের ইস্টারের আগে রোববারের একটি অনুষ্ঠান। এই ‘চলনযোগ্য উৎসব’ উপলক্ষে তখন শহরটি ব্যস্ত ছিল, সড়কে ছিলে অনেক মানুষ। কংগ্রেস হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করার দায়ে পরবর্তী সময়ে অঞ্চলটি ডেপুটি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

সোমবার রাতের ভিডিও বার্তা জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন নিজেদের প্রস্তাবের বিষয়ে অবিচল রয়েছে। আমাদের প্রধান দাবি, অন্তত বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা মস্কোর তরফে স্পষ্ট জবাব চাই। এটা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে যেকোনো আলোচনায় আমরা রাজি।’

এদিকে ইস্টারের যুদ্ধবিরতির পর সোমবার ভোরে ইউক্রেনের সমুদ্র নগরী ওদেসাসহ কয়েকটি স্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। হামলায় কয়েকটি আবাসিক ভবনে আগুন ধরে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের কুরস্ক অঞ্চলের একটি মঠ রাশিয়ার সেনারা পুনরুদ্ধার করেছে। এখানে ইউক্রেনের সেনারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম তাসের প্রতিবেদনে এ খবর বলা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে গত আগস্টে  ইউক্রেনের সেনারা অনুপ্রবেশ করেন। স্থানীয় কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে তাঁরা দ্রুত অঞ্চলটির বেশ কিছু জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেন। কিন্তু সম্প্রতি এসব জায়গা পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে রুশ সেনারা। ব্যাপক যুদ্ধের পর অঞ্চলটি থেকে ইউক্রেন ও তাদের অনুগত প্রায় সব বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া।

আগামীকাল বুধবার লন্ডনে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি বৈঠক হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউক্রেনের কর্মকর্তাদেরও এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। গত সপ্তাহ প্যারিসেও এ ধরনের একটি বৈঠক হয়েছিল। এতে ইউক্রেনে যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। জেলেনস্কির মতে, লন্ডন আলোচনার প্রাথমিক কাজ ‘নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে।’

এর আগে তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, মস্কো-কিয়েভের মধ্যে শান্তিচুক্তির কাজ বেশি জটিল হয়ে পড়লে ওয়াশিংটন আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেব।

আরও পড়ুন