ইউক্রেনকে কি লেপার্ড-২ ট্যাংক দিচ্ছে জার্মানি

জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ যুদ্ধট্যাংক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। সরকারি সূত্রের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলো এমন খবর প্রকাশ করেছে। খবর আল-জাজিরার।

যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্র চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর এই চাওয়ার প্রতি সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সবার নজর এখন জার্মানির দিকে। কেননা, জার্মান সরকার ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেনি। তবে বিভিন্ন সময় জার্মানির একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দিতে হলে তাঁদের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ বিষয়ে তাঁরা একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

লেপার্ড-২ ট্যাংক হলো বিশ্বের প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংকের একটি। জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়—এমন দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এই ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এই যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।
আরও পড়ুন
যুদ্ধে সহায়তার জন্য পোল্যান্ড লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চাইলে তাঁর সরকার বাধা দেবে না।
আনালিনা বায়েরবোক, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক। দেশটির কাছে এ ধরনের উন্নত ট্যাংক চাইছে ইউক্রেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এ পরিস্থিতিতে জার্মান চ্যান্সেলর শলৎজ ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছেন বলে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যম স্পেজেল। পরে দেশটির আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে একই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করে।  

এসব খবরে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার জন্য পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কোনো দেশ যদি জার্মানিতে তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়, সে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বার্লিন। যদিও এর আগে গত রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বায়েরবোক বলেছেন, যুদ্ধে সহায়তার জন্য পোল্যান্ড লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চাইলেও তাঁর সরকার বাধা দেবে না।

তবে ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার বিষয়ে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত খবর নাকচও করেনি দেশটির সরকার।

আরও পড়ুন
লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউরোপে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এই ট্যাংক ব্যবহার করে, আর এই ট্যাংকগুলো সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। ইউক্রেনে এগুলো পাঠানো সহজ। রক্ষণাবেক্ষণও সহজ হবে। এগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশও ইউরোপে আছে, তাই ইউক্রেনীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ হবে।
মিন্না অ্যালান্ডার, ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের রিচার্স ফেলো।

জার্মান অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি রাইনমেটাল জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে তারা ইউক্রেনে ১৩৯টি লেপার্ড যুদ্ধট্যাংক সরবরাহ করতে পারবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র মিডিয়া গ্রুপ আরএনডিকে বলেন, রাইনমেটাল আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ ২৯টি লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনে সরবরাহ করতে পারবে। আর ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুর দিক নাগাদ তারা একই মডেলের আরও ২২টি ট্যাংক সরবরাহ করতে পারবে।

এ ছাড়া কোম্পানিটি ৮৮টি পুরোনো লেপার্ড-১ ট্যাংকও ইউক্রেনে সরবরাহ করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।লেপার্ড-২ ট্যাংক হলো বিশ্বের প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংকের একটি। জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়—এমন দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এই ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এই যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।

এই ট্যাংকের নানা বৈশিষ্ট্য আছে। ডিজাইনও বিভিন্ন রকম হয়। এ ট্যাংকে নাইটভিশন ইকুইপমেন্ট এবং একটি লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার আছে, এর সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব মাপা যায়। লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার রুক্ষ ভূখণ্ড বা রুক্ষ ভূমির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় চলমান লক্ষ্যের ওপর ভালোভাবে নজরদারি করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ সরবরাহের জন্য কিছুদিন ধরে চাপের মধ্যে রয়েছে জার্মান সরকার। তবে শলৎজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি প্রথাগত কারণে ইউক্রেনে তাদের দেশের সামরিক অন্তর্ভুক্তি চায় না। এ ছাড়া মস্কো এর কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তা নিয়েও ভাবনায় রয়েছে দলটি। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে জার্মানি।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, তাঁর দেশ ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাবে। কিন্তু কিয়েভের চাহিদা আরও বেশি। সে কারণে ভলোদিমির জেলেনস্কি জার্মানিসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে লেপার্ড-২ ট্যাংক চান। তাঁর মতে, এই ট্যাংক যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।

এ বিষয়ে ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের রিচার্স ফেলো মিন্না অ্যালান্ডার বলেন, লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউরোপে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এই ট্যাংক ব্যবহার করে, আর এসব ট্যাংক সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। ইউক্রেনে এগুলো পাঠানো সহজ। রক্ষণাবেক্ষণও সহজ হবে। এগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশও ইউরোপে আছে, তাই ইউক্রেনীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ হবে।

আরও পড়ুন