রাজা তৃতীয় চার্লসের ফ্যাশনপ্রেম

নতুন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস
ছবি: এএফপি

ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লস আজ শুক্রবার ভাষণ দেবেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে ৭৩ বছর বয়সী চার্লস স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন রাজা হন। আজ তাঁর প্রথম ভাষণের দিন। তাই বিশ্ব গণমাধ্যম ও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন চার্লস। শুধু রাজা হিসেবে নয়, বিশ্ব ফ্যাশনের আলোচনাতেও চার্লস বেশ প্রাসঙ্গিক। বেসপোক থ্রি-পিস স্যুট বা ওয়াক্সড জ্যাকেটে চার্লস নিজস্ব স্টাইল তৈরি করে গত কয়েক দশক থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার নজরে আছেন নতুন এই রাজা।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাকে নিজস্ব স্টাইলের কারণে চার্লস বিশ্বের সেরা পোশাক পরা পুরুষের খেতাব অর্জন করেছিলেন। নতুন এই রাজার পোশাক থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত সবকিছুই আগে থেকে দেশের সেরা ডিজাইনার ও ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করে।

তবে ফ্যাশন, পোশাক–আশাকে বহু ব্যয়ের কারণে দীর্ঘদিন থেকেই সমালোচনার শিকার হয়েছেন চার্লস। কারণ, তাঁর মালিকানায় ধ্রুপদি নকশার অসংখ্য স্যুট আছে। যার অনেকগুলোই বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড অ্যান্ডারসন অ্যান্ড শেপার্ডের তৈরি করা। লন্ডনের সেভিল রোয়ে অবস্থিত এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরুষদের ধ্রুপদী ঘরানার পোশাক তৈরির জন্য এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড জনপ্রিয়।

ক্যামিলার সঙ্গে এনগেজমেন্টের ঘোষণার দিন ডবল–ব্রেস্টেড কোট পরা ছিলেন চার্লস।
ফাইল ছবি: এএফপি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার্লসের পোশাক পরিবর্তনের কাজে একদল সেনা কাজ করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীতে বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন চার্লসের জুতার ফিতা বাঁধার কাজে নিয়োজিত আছেন।

ফ্যাশনিস্তার কারণে মার্কিন সাময়িকী এসকোয়ার ২০০৯ সালে চার্লসকে বিশ্বের সেরা পোশাক পরা পুরুষের খেতাব দেয়। যদিও এই খেতাব পাওয়ার পর চার্লস রসিকতা করে বলেছিলেন, এটি ছিল সাময়িকীটির বিক্রি বাড়ানোর একটি কৌশল।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ব্রিটিশ আর্মির ওয়েলস গার্ডের লাল রঙের ইউনিফরমে চার্লস।
ফাইল ছবি: এএফপি

২০১২ সালে লন্ডন ফ্যাশন উইকে নিজের ফ্যাশন স্টাইল নিয়ে কথা বলেছিলেন চার্লস। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সবচেয়ে সেরা পোশাক পরা মানুষ থেকে সবচেয়ে বাজে পোশাক পরা মানুষ হতে চলেছি। এখন আমি চলছি থমকে যাওয়া ঘড়ির মতো। প্রতি ২৫ বছর পর পর আমার এমন সময় আসে।’

চার্লসের ছোটবেলার ছবিতে দেখা গেছে, তিনি শর্টসের সঙ্গে টাই পরে আছেন। স্কটল্যান্ডে যখন ছিলেন তখন এই পোশাকের সঙ্গে কখনো কখনো ব্লেজার পরাও ছিলেন। আবার কখনো হাঁটু পর্যন্ত লম্বা মোজাও পরে থাকতেন।

২০১৪ সালে সৌদি আরব সফরের সময় তিনি সে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তরবারি নাচিয়েছিলেন।
ফাইল ছবি: এএফপি

তরুণ বয়সে তিনি পোলো শার্ট পরতেন। এর পাশাপাশি সানগ্লাস, কাফলিঙ্কের সঙ্গে মিলিয়ে টাই ও স্কি জুতা পরে নিজের মধ্যে একজন খেলোয়াড়সুলভ ভাব নিয়ে এসেছিলেন। চার্লস সব সময় তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে সই করা আংটি পরেন।

নানা ধরনের পোশাকের প্রতি চার্লসের আগ্রহ রয়েছে। দেশের বাইরে যখন তিনি সফরে যান, তখন সে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরার চেষ্টা করেন। ২০১৪ সালে সৌদি আরব সফরের সময় তিনি সে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তরবারি নাচিয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে ঘানা সফরে তিনি সে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পোশাক পরেছিলেন। এ ছাড়া আফগানিস্তানে সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় তিনি সেনা সদস্যের পোশাক পরে গিয়েছিলেন।

আফগানিস্তানে সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় চার্লস সেনা সদস্যের পোশাক পরে গিয়েছিলেন।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত বছরের জুনে একটি দাতব্য তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে চার্লস লম্বা ট্যান ব্লেজার, চিনোস প্যান্ট, টাই ও সুইডি জুতা পরে সাইকেল চালিয়েছিলেন। পরে টাইট ফিটিং স্ট্রেসি খেলার পোশাক পরেও সাইকেল চালিয়েছিলেন। সে সময় এই পোশাক পরার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এই পোশাক পরা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো।’

৭০ বছর বয়সের পর থেকে চার্লস ডবল–ব্রেস্টেড স্যুট, পকেটে সিল্কের রুমাল ও ম্যাচিং করা টাই পরা শুরু করেন।

বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন তাঁর নেতৃত্বে কোনো রেজিমেন্টের বৈঠকে সব সময় সামরিক পোশাক পরেন চার্লস।
ফাইল ছবি: এএফপি

এক সময় পশ্চিম ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারে হাইগ্রোভ এস্টেটে চাষবাস করা শুরু করেন চার্লস। সে সময় তিনি আধুনিক কৃষকের পোশাক পরেছিলেন। হাতে থাকতো বড় গ্লাভস আর গায়ে ছিল বড় পকেটের লম্বা বারবার ওয়াক্সড জ্যাকেট।

পারিবারিক ছবিতে ব্লেজার ও টাই পরে চার্লস (বাঁ থেকে তৃতীয়)
ফাইল ছবি: এএফপি

বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন বাকিংহাম প্যালেসের ব্যালকনিতে হাজির হওয়া বা তাঁর নেতৃত্বে কোনো রেজিমেন্টের বৈঠকে সব সময় সামরিক পোশাক পরেন। ২০০৮ সালে ৬০তম জন্মদিনে চার্লস ব্রিটিশ আর্মির ওয়েলস গার্ডের লাল রঙের ইউনিফরম পরেছিলেন। এই পোশাকের সঙ্গে তাঁর বুকে ছিল মেডেল ও তাঁর বেল্টের সঙ্গে বাঁধা ছিল সোনালি তলোয়ার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চার্লসকে তাঁর আগের পোশাকগুলো পরার ব্যাপারে আগ্রহী হতে দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি পুরোনো পোশাক ফেলে দিতে পছন্দ করেন না। ২০১৮ সালে ছোট ছেলে হ্যারির সঙ্গে মেগান মের্কেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৯৮৪ সালে ব্যবহার করা মুক্তাখচিত কোট পরে হাজির হয়েছিলেন চার্লস।
ভোগ সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চার্লস জানিয়েছিলেন, আমি একটি পোশাক বছরে কয়েকবার পরি। কিন্তু যদি কোনো পোশাক আমার শরীরে আর ফিট না করে, তখন নতুন পোশাক তৈরি করে নিই।’

২০১৮ সালে ছোট ছেলে হ্যারির সঙ্গে মেগান মের্কেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৯৮৪ সালে ব্যবহার করা মুক্তাখচিত কোট পরে হাজির হয়েছিলেন চার্লস।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাজা চার্লসকে অনেক বছর ধরেই দুটি কোট প্রায় সময় পরতে দেখা যায়। এর একটি হলো ডবল–ব্রেস্টেড টুইড ও আরেকটি হলো বাদামি রংয়ের ক্যামেলহেয়ার ওভারকোট। পছন্দের পোশাক বেশি দিন যেন পরতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয় চার্লসের জন্য।

আরও পড়ুন

চার্লসের আত্মজীবনীর লেখক মাইকেল ফার বলেছেন, তাঁর (চার্লস) পছন্দের পোশাকে যদি কখনো মেরামতের দরকার হয়, এ কারণে দরজি একই কাপড় আলাদা করে সংরক্ষণ করেন।

আরও পড়ুন