যেকোনো মূল্যে ইউক্রেনে লক্ষ্য অর্জন করবে রাশিয়া: পুতিন
ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে কড়া ভাষায় কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও নিজের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে বা সামরিক শক্তি খাটিয়ে—যেভাবেই হোক না কেন, ইউক্রেনে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করবে মস্কো।
বুধবার রাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্ষিক সভায় এ কথা বলেন পুতিন। এমন সময় তিনি এই অবস্থান তুলে ধরলেন, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপরতা বাড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ তৎপরতা ঘিরে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
পুতিন বলেন, যেকোনো মূল্যে মস্কোর বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য পূরণ করা হবে। ইউক্রেন যদি বাস্তবমুখী আলোচনা না চায়, তাহলে যুদ্ধের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ভূখণ্ডগুলো মুক্ত করবে রাশিয়া। এই যুদ্ধের ক্ষেত্রটা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সরকারগুলো ইচ্ছা করে সৃষ্টি করেছে বলেও অভিযোগ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এরপর ইউরোপের নেতাদের নিয়ে কথা বলেন পুতিন। তাঁদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ করেন। পুতিন বলেন, ‘ইউরোপের ছোট্ট শূকরেরা দ্রুত সাবেক মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। তারা আশা করেছিল, আমাদের দেশের পতন থেকে লাভবান হবে।’
পুতিনের এই মন্তব্যের আগে সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় শান্তিচুক্তি-সংক্রান্ত ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়েছে। যদিও মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুই সমস্যা—ভূখণ্ড ছাড় ও জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।
যুদ্ধ বন্ধের জন্য পুতিন বারবার ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করে আসছেন। পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে দনবাস গঠিত। এর প্রায় সবটুকু বর্তমানে রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে। তবে মস্কোর হাতে দনবাস ছাড়তে নারাজ কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, জনগণের রায় ছাড়া এমন পদক্ষেপ নিতে পারবেন না তিনি।
এ ছাড়া বার্লিন আলোচনায় ইউক্রেনকে কিছু নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলেছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য দেশটির সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেখানে ইউরোপের সেনা মোতায়েনের মতো বিষয়। বিষয়টি যুক্ত করে রাশিয়ার কাছে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ওই সব প্রস্তাব পুতিন মানবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে কিয়েভের প্রতি সমর্থন জারি রাখতে গতকাল ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এই যুদ্ধ যে ‘অর্থহীন’, তা মস্কোকে বোঝানোর কথাও ইউরোপের দেশগুলোকে বলেছেন তিনি। বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া একের পর এক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে যে তারা যুদ্ধ আরও এগিয়ে নিতে চায়। ইউক্রেন রাশিয়ার পাগলামো থেকে সত্যিকারের সুরক্ষা চায়। কিয়েভ এখন সব মিত্রকে নিয়ে সেই সুরক্ষা পাওয়ার জন্য কাজ চালিয়ে যাবে।