‘ডে অব দ্য জ্যাকেল’খ্যাত লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ মারা গেছেন

ফ্রেডেরিক ফোরসাইথছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সর্বাধিক বিক্রীত ব্রিটিশ উপন্যাসের রচয়িতা ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি প্রায় ২০টি গোয়েন্দা থ্রিলারের লেখক।

ফোরসাইথ একসময় সংবাদ প্রতিবেদক এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল’-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেন।

মুখপাত্র জনাথন লয়েড জানান, ফোরসাইথ গতকাল সোমবার বাকিংহামশায়ারের জর্ডানস গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন।

লয়েড বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা থ্রিলার লেখকের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’

ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলেন ফোরসাইথ। তখন তাঁর বয়স ছিল সবে ত্রিশের কোঠায়। পরে তাঁর লেখা বইয়ের ৭ কোটি ৫০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়।

২০১৫ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে ফোরসাইথ লিখেছিলেন, ‘দ্রুত অর্থ উপার্জনের অনেক উপায় আছে, কিন্তু সাধারণ তালিকায় উপন্যাস লেখার অবস্থান ব্যাংক ডাকাতির চেয়েও নিচে।’

ফোরসাইথ মাত্র ৩৫ দিনে ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল’ লেখেন। ডানপন্থী চরমপন্থীরা ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে—এমন একটি কাল্পনিক গল্প এটি।

১৯৭১ সালে উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক সাফল্য পায়। পরবর্তী সময়ে এ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর মধ্য দিয়েই ভেনেজুয়েলার বিপ্লবী ইলিচ রামিরেজ সানচেজ ‘কার্লোস দ্য জ্যাকেল’ উপাধি পান।

এরপর ফোরসাইথ একের পর এক সর্বাধিক বিক্রীত উপন্যাস উপহার দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ওডেসা ফাইল’, ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’। ২০১৮ সালে তাঁর ১৮তম উপন্যাস ‘দ্য ফক্স’ প্রকাশিত হয়।

ফোরসাইথ বিমানবাহিনীর পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অসাধারণ পারদর্শিতা ছিল। তিনি ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও রুশ ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভাষার ওপর দক্ষতা থাকার কারণে ১৯৬১ সালে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সে যোগ দেন। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে তিনি রয়টার্সের হয়ে প্যারিস ও বার্লিনে নিয়োজিত ছিলেন।

ফোরসাইথ রয়টার্স ছেড়ে বিবিসিতে যোগ দেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁর দাবি, নাইজেরিয়া নিয়ে সঠিকভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে ব্যর্থ হয়েছে বিবিসি। তাঁর মতে, বিবিসির প্রতিবেদনে আফ্রিকা সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশ–পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা গেছে।

জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী সংবাদপত্র ডেইলি এক্সপ্রেসে কলাম লিখতেন।

১৯৮৮ সালে ক্যারোল কানিংহ্যামের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ ১৯৯৪ সালে স্যান্ডি মলয়কে বিয়ে করেন। ১৯৮০-এর দশকে এক বিনিয়োগ জালিয়াতিতে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। নিজের আর্থিক অবস্থা টিকিয়ে রাখতে তখন তাঁকে আরও বেশি করে উপন্যাস লিখতে হয়।

প্রথম স্ত্রী ক্যারোলের সঙ্গে ফোরসাইথের দুই ছেলে আছেন। তাঁরা হলেন স্টুয়ার্ট ও শেইন।