‘নিয়ন্ত্রণহীন’ দাবানলে পুড়ছে স্পেনের তেনেরিফে দ্বীপ

গত বুধবার স্পেনের মাউন্ট তাইদে আগ্নেয়গিরির কাছের একটি ন্যাশনাল পার্কে দাবানল দেখা দেয়
ছবি: রয়টার্স

স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফে দ্বীপের উত্তরাংশে ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এমন অবস্থায় গতকাল শনিবার হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে তাঁদের বাড়িঘর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকাগুলোয় দাবানল এখনো ছড়ায়নি।

গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যে গত বুধবার স্পেনের মাউন্ট তাইদে আগ্নেয়গিরির কাছের পার্বত্য এলাকায় একটি ন্যাশনাল পার্কে আগুন দেখা দেয়। আঞ্চলিক নেতা ফার্নান্দো ক্লাভিজো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত শুক্রবার রাতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রচণ্ড বাতাসের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়।

শুক্রবার কিছু মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। দাবানল পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল সকালে আরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফার্নান্দো ক্লাভিজো আরও বলেন, ঘন ধোঁয়ার কারণে হেলিকপ্টার থেকে পানি ফেলে আগুন নেভানোর চেষ্টাও ব্যাহত হচ্ছে।

ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের জরুরি সেবাবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১১টির মতো শহরে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বিকেল নাগাদ ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, শুক্রবার এ সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০ ছিল।

এখন পর্যন্ত দাবানলে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জায়গা পুড়ে গেছে। তেনেরিফের স্থানীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট রোসা দাভিলা সাংবাদিকদের বলেন, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে এ মাত্রার দাবানল আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষের জীবন বাঁচানোকেই এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তবে রোসা দাভিলা বলেছেন, এ দাবানলের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লা ভিক্টোরিয়া এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া কিছু মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।  

৫৮ বছর বয়সী পাউলিনা ফার্নান্দেজ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখানে আসার আগের রাতে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম। সবকিছু পুড়ে যাচ্ছিল। ছাদগুলো ছাইয়ে ভরে গেছে।’

নিরাপদে সরে যাওয়া মানুষদের অনেকে তাঁদের পোষা প্রাণীদের নিয়ে চিন্তিত। কেউ কেউ পোষা প্রাণীগুলো বাড়িতে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছেন। রয়টার্সের ফুটেজে দেখা গেছে, কেউ কেউ তাঁদের ঘোড়াগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন।

দ্বীপের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলো এখন পর্যন্ত দাবানল থেকে মুক্ত আছে। সেখানকার দুটি বিমানবন্দরের কার্যক্রমও স্বাভাবিক আছে।

প্রচণ্ড গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এবারের গ্রীষ্মে বিভিন্ন দেশ অস্বাভাবিক মাত্রার দাবানলের কবলে পড়েছে। গত জুলাইয়ে স্পেনের লা পালমা এবং কানাডায় দাবানল দেখা দিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে দাবানলে ১১০ জনের প্রাণহানি হয়। দাবানলের কারণে ঐতিহাসিক শহর লাহাইনা ধ্বংস হয়ে গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায়ই চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে।