সাড়ে ১০ হাজার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততায় নাৎসি ‘টাইপিস্টের’ সাজা

ইমগার্ড ফর্কনার
ছবি: এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর একটি বন্দিশিবিরে আটক ১০ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে এক বৃদ্ধাকে দুই বছরের স্থগিত সাজা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জার্মানির উত্তরাঞ্চলে ইতজেহো শহরের একটি আদালত এ রায় দেন। খবর গার্ডিয়ানের।

সাজা পাওয়া ওই বৃদ্ধার নাম ইমগার্ড ফর্কনার। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি পোল্যান্ডের স্টাটহফ নাৎসি বন্দিশিবিরে কাজ করেছিলেন। ফর্কনার ছিলেন বন্দিশিবিরের প্রধান পল ওয়ের্নার হপের সচিব। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮-১৯ বছর। ওই বয়সের কারণে তাঁর বিচার হয়েছে কিশোর আদালতে।

ফর্কনারের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে তা আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। তিনি পলাতক থাকার কারণে শুনানি কিছুটা পিছিয়ে যায়। পরে চলতি মাসের শুরুর দিকে এসে ফর্কনার বলেন, স্টাটহফ বন্দিশিবিরে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি দুঃখিত। তবে এর সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নাৎসি বন্দিশিবিরে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের জন্য জার্মানির কোনো বেসামরিক নারী এই প্রথম দোষী সাব্যস্ত হলেন। ফর্কনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আদালতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৪০ দিন শুনানি চলেছে। শুনানিতে অংশ নেন ওই বন্দিশিবির থেকে বেঁচে ফেরা এবং নিহত বন্দীদের পরিবারের সদস্য—এমন ৩০ জন।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া শুনানিতে ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। তাঁরা আদালতকে স্টাটহফ বন্দিশিবিরের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড এবং ফর্কনারের কাজের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, বন্দীদের কীভাবে নির্যাতন করা হতো এবং তাঁদের কোন কোন কৌশলে হত্যা করা হতো, সেগুলো জানতেন ফর্কনার।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, অনেক বন্দীকে কোনো খাবার দেওয়া হতো না। অনেককেই আবার প্রচণ্ড ঠান্ডায় খোলা স্থানে ফেলে রাখা হতো। স্টাটহফে আনুমানিক ৬৩ হাজার থেকে ৬৫ হাজার বন্দীকে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁদের প্রায় ২৮ হাজার ব্যক্তি ছিলেন ইহুদি। এ হত্যাকাণ্ড চালাতে মূলত ব্যবহার করা হয়েছিল বিষাক্ত গ্যাসের চেম্বার। আবার পেছন থেকে গুলি করেও অনেককে হত্যা করা হয়েছিল।

বন্দিশিবিরে হত্যার শিকার হয়েছিলেন ৮৪ বছর বয়সী জোসেফ সালোমনোভিচের বাবা এরিক। জোসেফ কোনোমতে শিবির থেকে বেঁচে ফেরেন। ফর্কনারের শুনানি চলার সময় নিজ দেশ চেক প্রজাতন্ত্র থেকে আদালতে হাজির হন তিনি। আদালতের বাইরে জোসেফ বলেন, তিনি বাবার ছবি নিয়ে ফর্কনারের মুখোমুখি হতে চাইছিলেন। তিনি ওই বন্দিশিবিরের অফিসকর্মী হলেও পরোক্ষভাবে একজন অপরাধী।

শুনানি চলার সময় বিচারকসহ আদালতের কর্মকর্তারা স্টাটহফ বন্দিশিবির ঘুরে দেখেন। বিশ্বযুদ্ধের সময় এ অঞ্চল জার্মানি দখল করে নিয়েছিল। বন্দিশিবিরে ফর্কনারের কাজের টেবিল এবং সে সময় হত্যাকাণ্ড চালানোর বিভিন্ন পদ্ধতি খতিয়ে দেখে বিচারকসহ অন্যরা মত দেন, ফর্কনার তাঁর জানালা থেকে এবং অফিসে আসা-যাওয়ার সময় যা দেখতেন এবং এ ছাড়া সচিব হিসেবে যেসব কাজ করতেন, সেগুলো বন্দিশিবিরে কী চলছিল, তা বোঝার জন্য যথেষ্ট।