স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করতেন জার্মান নাগরিক

ধর্ষণপ্রতীকী ছবি

জার্মানিতে মাদক সেবনের মাধ্যমে অচেতন করে স্ত্রীকে বছরের পর বছর ধরে ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে শেয়ার করার দায়ে আদালত এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এই ঘটনা ফ্রান্সের আলোচিত ‘ডমিনিক প্যালিকট’ মামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

ফার্নান্দো পি (৬১) নামের এক স্কুল পরিচ্ছন্নতাকর্মী তাঁর নিজের বাড়িতেই স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে নির্যাতন করতেন। তিনি এই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করতেন এবং স্ত্রীর অজান্তেই সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতেন।

শুক্রবার জার্মানির আখেন শহরের একটি আদালত ফার্নান্দোকে ৮ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালতের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ৩৪টি ক্ষেত্রে স্ত্রীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করেছেন। এর মধ্যে অন্তত চারটি ঘটনায় ধর্ষণ ও শারীরিক ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তদন্তে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর ধরে ফার্নান্দো নামের ওই ব্যক্তি এই অপরাধ করে আসছিলেন। তবে আদালত ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ের অপরাধের জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তিনি গ্রুপ চ্যাট ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসব ভিডিও শেয়ার করতেন।

জার্মানির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই মামলা জার্মানির আইনি ব্যবস্থার বড় একটি ফাঁক সামনে এনেছে।

জার্মানিতে বর্তমানে আইন ‘না’ মানে ‘না’ নীতি মেনে চলে। এই নীতি অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে মৌখিকভাবে বাধা দিতে হয়। কিন্তু এই মামলায় স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে অচেতন করা হয়েছিল। ফলে তাঁর পক্ষে ‘না’ বলা সম্ভব ছিল না। অধিকারকর্মীরা এখন ‘হ্যাঁ’ মানে ‘হ্যাঁ’ (সম্মতি থাকলেই কেবল যৌন সম্পর্ক বৈধ) নীতি চালুর দাবি জানাচ্ছেন।

ফ্রান্সেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ডমিনিক প্যালিকট তাঁর স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে অসংখ্য অপরিচিত পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণ করিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও চ্যাটরুমগুলো এখন অপরাধীদের জন্য ‘সহিংসতার বড় ক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে। এখানে তারা মাদক খাওয়ানো বা নির্যাতনের কৌশল একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করে।

অধিকারকর্মীরা আশা করছেন, এই রায়ের ফলে ইন্টারনেটে নারীদের ওপর চলা এমন ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধে কড়া আইন প্রণীত হবে। এমন আইন হলে অপরাধীরা আর নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারবে না।