ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ‘অতিশয় বিরক্তিকর’: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগে বিপুল পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে ৫ শিশুসহ অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। কিয়েভে যুদ্ধের এই পর্যায়ে রাশিয়ার এতটা ব্যাপক হামলাকে ‘অতিশয় বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া যা করছে, আমি মনে করি, তা অতিশয় বিরক্তিকর। আমি মনে করি, এটা সত্যিই জঘন্য।’

ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়া সফরে যাবেন। বর্তমানে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় গ্রহণ করেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন ট্রাম্প। এরপর স্টিভ উইটকফ বেশ কয়েকবার মস্কো সফর করেছেন। সফরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তখন ইউক্রেনে হামলা কমিয়েছিল রাশিয়া।

কিন্তু জুলাইয়ের মাঝামাঝি যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময় বেঁধে দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তা কমিয়ে ১০-১২ দিনে নামিয়ে এনেছেন তিনি। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি সেই হুমকি পুনরাবৃত্তি করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলা বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি বারবার হতাশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ডাকা’

শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভে রাশিয়ার আগের দিনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আমরা যে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলাম, তা শেষ হয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘হামলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত ৫ শিশুসহ ৩১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত শিশুদের মধ্যে কনিষ্ঠজনের বয়স দুই বছর।’ তিনি জানান, রাশিয়া জুলাই মাসে ইউক্রেনে ৩ হাজার ৮০০–এর বেশি ড্রোন ও প্রায় ২৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিয়েভকে নিশানা করেই অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে।

এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, ‘(ইউক্রেনে) যা ঘটছে, তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইউরোপীয় নেতারা এবং অন্যান্য অংশীদাররা স্পষ্টভাবে দেখছেন এবং রাশিয়ার নিন্দা জানাচ্ছেন। বিষয়টি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তির যৌথ চেষ্টার মাধ্যমেই রাশিয়াকে থামানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আগের দিন বৃহস্পতিবার অনলাইনে আয়োজিত এক সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ দিয়ে বাধ্য করা’ সম্ভব। স্নায়ুযুদ্ধকালীন হেলসিংকি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

বক্তৃতায় জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্ব যদি রাশিয়ার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্য স্থির না করে, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, যুদ্ধ শেষ হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে মস্কো।’

ধ্বংসস্তূপ থেকে সন্তানকে উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকা এক মা অপর এক ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করছেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে, ৩১ জুলাই ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

চাসিভ ইয়ার দখল রাশিয়ার

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনের চাসিভ ইয়ার শহরটি দখল করেছে। কিন্তু রাশিয়ার দাবিকে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছে ইউক্রেন।

কিন্তু রুশ সেনবাহিনীর পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেশটির সেনাদের চাসিভ ইয়ার শহরের জনশূন্য ধ্বংসস্তূপে পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভিডিওটি যাচাই করে দেখেছে। তাদের ভিডিওটি যথার্থ বলে মনে হয়েছে।

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দখল করতে রুশ সেনাদের প্রায় ১৬ মাস সময় লেগেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাসিভ ইয়ার শহর দখলের দাবি সত্য হয়ে থাকলে রুশ সেনাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

শুক্রবার জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শিগগির ইউক্রেনে দুটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠাবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনে পাঠাতে এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও বার্লিনের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। দুই ও তিন মাসের মধ্যে কিয়েভকে অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামও দেবে বার্লিন।

৮ আগস্টের মধ্যে চুক্তি চান ট্রাম্প

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৮ আগস্টের মধ্যে চুক্তি করতে চান বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জন কেলি। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। ১৫ সদস্যের পরিষদে জন কেলি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই অবশ্য আলোচনা করতে হবে। চুক্তি করার এটাই উপযুক্ত সময়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, ৮ আগস্টের মধ্যে এটি হতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র (প্রয়োজনে) অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও প্রস্তুত।’