রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ভোট শেষ হলো বিক্ষোভ, হামলায়
নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তিন দিনের এই ভোটের শেষ দিন দুপুরে বিক্ষোভের ডাক দেন পুতিনবিরোধীরা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় হামলার ব্যাপকতা বাড়িয়েছে ইউক্রেন। এসব হামলার কড়া জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এদিকে বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিন দিনের ভোট গ্রহণ গতকাল রোববার শেষ হয়েছে।
ভোট গ্রহণের প্রথম দিন শুক্রবার পুতিন অভিযোগ করেন, ইউক্রেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ এসব হামলার জন্য কিয়েভকে শাস্তি পেতে হবে।
দেশের নিরাপত্তা পর্ষদের বৈঠকে পুতিন বলেন, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেন-সমর্থিত প্রায় আড়াই হাজার যোদ্ধা ট্যাংক নিয়ে রাশিয়ার দুটি অঞ্চলে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, এসব হামলার জন্য শত্রুদের শাস্তি পেতে হবে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এসব হামলা চালিয়েছে। এসব গোষ্ঠী ক্রেমলিনের শাসনের বিরোধিতা করে আসছে।
শুক্রবার ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরনগরী ওদেসায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হন। আহত হন আরও ৭০ জন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। ওই হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এই অশুভ হামলার যথোপযুক্ত জবাব পাবে রাশিয়া।
ভোটকেন্দ্রে ড্রোন হামলা
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচন চলাকালে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক ডজন ড্রোন ধ্বংস করেছে তাদের বাহিনীগুলো। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
সবচেয়ে বড় হামলা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রাসনোদর এলাকায়। সেখানে একটি তেল শোধনাগারে হামলা হয়েছে। ক্রাসনোদর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্লাভিয়ানস্ক-অন-কুবান এলাকায় ১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। এসব ড্রোন নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে একটি ড্রোন শোধনাগারে আঘাত হানলে আগুন ধরে যায়।
রুশ নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের প্রশাসক ভ্লাদিমির রোগভ বলেন, রোববার একটি ভোটকেন্দ্রে দুটি ইউক্রেনীয় ড্রোন আঘাত হানে। এতে ভবনটিতে আগুন ধরে গেলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রাশিয়ায় তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইউক্রেন। একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, হামলায় ওই তেল শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। রাশিয়ার অর্থনীতি ও দেশটির তেল রপ্তানি দুর্বল করতে এ হামলা চালানো হয়।
সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ শহরে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা আহত হয়েছেন বলে আঞ্চলিক গভর্নর জানিয়েছেন।
রাতে মস্কোর কাছেও কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এ ধরনের হামলা বাড়িয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। আকাশপথে হামলায় নতুন ড্রোন সক্ষমতার প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।
ভোটের দিন বিক্ষোভের ডাক
এদিকে নির্বাচনের শেষ দিন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন পুতিনবিরোধীরা। দেশটির প্রয়াত বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া রোববার দুপুরে বিক্ষোভ করতে অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানান। নাভালনির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে এই বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।
মস্কোয় ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে দুপুর লোকজনকে সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। তবে তাঁদের কাউকে বিক্ষোভ করতে বা রাজনৈতিক স্লোগান দিতে দেখা যায়নি।
অবশ্য বিভিন্ন দেশে প্রবাসী রুশদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন ইউলিয়া। বার্লিনে পুতিনবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি।
জর্জিয়ার রাজধানীর তিবলিসিতে কয়েক শ পুতিনবিরোধী কর্মী বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাঁদের হাতে স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বিক্ষোভ হয়েছে কিরগিজস্তানে রাজধানী বিশকেকেও। সেখানে রুশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন।
ভোট পড়েছে সাড়ে ৬৭ শতাংশ
বড় দেশ হওয়ার কারণে ১১টি টাইম জোনে রাশিয়ার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকটি এলাকায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানায়।
ভোট পড়ার এই হার ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে সামান্য বেশি। ওই নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার শুরু হওয়া এই নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। ভোট গ্রহণের প্রথম দিনও রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। ব্যালট বাক্সে রং ঢেলে দেওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুতিনের বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থেকে পুতিন রাশিয়ায় ক্ষমতায় আছেন। নতুন ছয় বছর মেয়াদে অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যত রাশিয়ায় ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন তিনি।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের সামনে সত্যিকার অর্থে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যদি পুতিন আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন, তাহলে তিনি ১৮ শতকে ক্ষমতায় থাকা ক্যাথেরিন দ্য গ্রেটের পর সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা রুশ নেতা হবেন।