জার্মানির পার্লামেন্টে কঠোর অভিবাসন নীতি পরিকল্পনা পাস হয়নি

গতকাল হামবুর্গের টাউন হলের সামনে অভিবাসন ও শরণার্থী নীতিবিষয়ক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেনছবি: রয়টার্স

জার্মানিতে তিন দিন ধরে কঠোর অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি নিয়ে রাজনৈতিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। আপাতত সে অসন্তোষ থামবে বলে মনে করা হচ্ছে। জার্মান পার্লামেন্ট বা রাইখস্ট্যাগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রস্তাবটি আইন হিসেবে পরিণত করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে জার্মানির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। আজ শনিবার আবারও বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে।

গত ২৯ জানুয়ারি জার্মান পার্লামেন্টে অভিবাসন ও শরণার্থী নীতিবিরোধী পরিকল্পনার প্রস্তাবটি করেছিল দেশটির অন্যতম বড় দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। এ প্রস্তাব সংসদে পাস করতে সহায়তা করেছে জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল অভিবাসী বিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি)। দলটি ইতিমধ্যে দেশটিতে নব্য নাৎসি এবং কট্টর অভিবাসীবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত।

এই প্রস্তাবের মূলে রয়েছেন সিডিইউর সভাপতি ফ্রিডরিশ মের্জ। তিন সপ্তাহ পর জার্মানিতে ২১তম নির্বাচন। ওই নির্বাচনে সিডিইউর চ্যান্সেলর প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন।

গতকাল বিকেলে জার্মান পার্লামেন্টে কঠোর অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে আবেগঘন বিতর্ক হয়। অনেক সংসদ সদস্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বর্বরতার ঘটনাসহ স্বৈরাচার অ্যাডলফ হিটলারের জাতিবিদ্বেষী রাজনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অনেক সংসদ সদস্য বিতর্ক করতে গিয়ে জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে অভিবাসীবিদ্বেষী রাজনীতিকে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার অভিলাষ হিসেবে বর্ণনা করেন। এ বিতর্কের পর ভোটাভুটিতে কঠোর অভিবাসন নীতিবিষয়ক প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়।

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্রেজার আগামী দিনে এএফডির সমর্থনে ফ্রিডরিখ মের্জকে আবারও এ ধরনের চেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিডিইউ ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কেন্দ্র ত্যাগ করেছে’।

সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সংসদে তাঁর দল সিডিইউর এ ধরনের প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এএফডির মতো দলটির কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এ ধরনের প্রস্তাব পাসের জন্য দলটির বর্তমান নেতা ফ্রিডরিখ মের্জের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

তবে ফ্রিডরিখ মের্জ সংসদে পরাজিত হলেও আগামী দিনে এ প্রস্তাব সংসদে অনুমোদনের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে ক্যাম্পেইন নামের একটি সংগঠন জার্মানির রাজনীতিতে রক্ষণশীলদের প্রভাবের বিরুদ্ধে আগামীকাল রোববার ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটে আবারও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

জার্মানির কঠোর অভিবাসন ও শরণার্থী নীতিবিষয়ক প্রস্তাবে ইউরোপের বাইরে থকে আসা জার্মানিতে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ সীমিত করার আহ্বান করা হয়েছিল। সেই অনুসারে অভিবাসন ও শরণার্থী নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার লক্ষ্যে বেশ কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করার কথা রয়েছে। যেমন কোনো সুরক্ষাপ্রাপ্ত শরণার্থী বা অভিবাসীর সঙ্গে পারিবারিক পুনর্মিলনের যে সুযোগ ছিল, তা বন্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নবহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকদের ভ্রমণ নথিপত্র হারিয়ে গেলে বা যাঁরা ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁদের জন্য যে সহনশীলতা দেখানো হতো, তা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়। জার্মানির সীমান্তগুলোয় ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন