রানির মৃত্যুতে লন্ডনের মসজিদে শোকসভা ও জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে বিতর্ক
প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য যুক্তরাজ্যের একটি মসজিদে শোকসভার আয়োজন এবং মসজিদে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘটনা স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ওই শোকসভায় উপস্থিত থাকায় ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদকে অপসারণের দাবি উঠেছে। এ নিয়ে গত শনিবার মাগরিবের নামাজের পর ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভেতরেই একদল মুসল্লি তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর আগে ৬ অক্টোবর মসজিদের পেছনের ফটকে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
মসজিদে জাতীয় সংগীত গাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা বলছেন, ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ শোকসভায় অংশ নিয়ে ইসলামবিরোধী কাজ করেছেন। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় অবস্থিত ইস্ট লন্ডন মসজিদ বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যে ১০ দিনব্যাপী চলে রাষ্ট্রীয় শোক। ১৫ সেপ্টেম্বর রানির প্রতি সম্মান জানানো এবং নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণকে স্মরণীয় করতে এক সভার আয়োজন করে ‘লন্ডন সেন্ট্রাল মস্ক’। এটি রিজেন্ট পার্ক মসজিদ নামে অধিক পরিচিত।
ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের পাশাপাশি অতিথি ছিলেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে রানির প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি নতুন রাজাকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাজ্যের পরিবর্তিত জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কিং’ গাওয়া হয়। আয়োজকদের দাবি, এটিই ছিল মসজিদে শোকসভার আয়োজন ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রথম ঘটনা।
কিন্তু মসজিদে এমন আয়োজন নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। বিশেষ করে বাংলাদেশি মুসলিমরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় তাঁকে অপসারণের দাবি ওঠে। এই দাবিতে অনলাইনে একটি পিটিশন (গণস্বাক্ষর) চালু করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে তীব্র সমালোচনা।
চাপের মুখে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠানের পর থেকেই ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদকে দায়িত্ব পালনে বিরত রাখে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন মুফতির ফতোয়া নেয় মসজিদ কর্তৃপক্ষ। যার ভিত্তিতে ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ দায়িত্বে ফিরছেন বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়। এ খবর জানাজানি হলে গত শনিবার মসজিদের ভেতরে ওই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।
যোগাযোগ করা হলে মসজিদ কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মসজিদ কমিটি বৈঠকে বসবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানানো হবে।
ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ দায়িত্বে ফিরবেন বলে কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটি কার্যকর হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা জানান।
২০১৭ সালে লন্ডনের ফিনসব্যারি পার্ক মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হামলাকারীকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি তখন ফিনসব্যারি পার্ক মসজিদের ইমাম ছিলেন। কমিউনিটির সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য রানির কাছ থেকে ওবিই (অফিসার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাব পান ইমাম মাহমুদ।
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক ইমাম আজমল মাশরুরও রানির মৃত্যুর পর সমবেদনা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারণে তুমুল সমালোচনার শিকার হন। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী বা রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুতে যদি আমরা সমবেদনা জানাতে না পারি, তাহলে আমরা নিজেরা কি করে অন্যের কাছ থেকে সমবেদনা আশা করব? আমরা যদি অন্যের সংস্কৃতির প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করি, তাহলে কী করে আমরা আশা করব যে অন্যরা আমাদের সংস্কৃতির প্রতি সহনশীল হবে? আমরা কী করে একই সমাজে বসবাস করব?’