বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আলোচনায় কী পেল ইউক্রেন

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে বার্লিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিয়েভের আলোচনাছবি: রয়টার্স

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একটি শান্তিচুক্তির জন্য সবশেষ জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ইউরোপ ও ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র কী কী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপের নেতারা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি তালিকা সামনে এনেছেন। এতে বলা হয়েছে, কিয়েভ বাহিনীকে সহায়তা এবং দেশটির আকাশ ও জলসীমা রক্ষার জন্য ইউরোপের নেতৃত্বে একটি বাহিনী গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে হামলা থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য আইনি প্রতিশ্রুতি দেবে ইউরোপ।

তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও দেশটিকে সহায়তা করবে ইউরোপ। এই বাহিনীর সেনাসংখ্যা আট লাখের মধ্যে সীমিত থাকবে। যদিও একটি শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনের এর চেয়ে অনেক কম সেনা থাকতে হবে বলে দাবি করে আসছে মস্কো।

ইউক্রেনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে। সেটি হলো রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন একটি ব্যবস্থা। ইউক্রেনে ভবিষ্যতে কোনো হামলার ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা দেবে তারা। এ ছাড়া তালিকায় ইউক্রেনের পুনর্গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আসতে পারে জব্দ করা রুশ সম্পদ থেকে।

এর আগেও শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হয়েছে। তবে কিয়েভের সুরক্ষার জন্য বার্লিনে ইউরোপীয় নেতাদের তুলনামূলক বেশি জোর দিতে দেখা গেছে। এবারের বৈঠকে কিয়েভে জন্য সবচেয়ে ভালো বিষয়টি হলো নিজেদের সুরক্ষার জন্য ইউক্রেনের মাটিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সেনাদের পেতে পারে তারা।

নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওই তালিকায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি ছাড়াও ইউরোপের আরও সাত দেশের নেতারা সই করেছেন। দেশগুলোর ভাষ্য, যুদ্ধ বন্ধে রাজি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনে বিরাট নিরাপত্ত নিশ্চয়তা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সহায়তা দেবে এই তালিকা। আর জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেছেন, ‘এখন আমাদের সত্যিকারের শান্তিপ্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে।’

তাহলে কি এখন যুদ্ধ থেমে যাবে? এখনই তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার এখন এই তালিকা রাশিয়ার কাছে নিয়ে যাবেন। এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে ইউরোপের দেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তার এই তালিকা আদৌ ক্রেমলিন মেনে নেবে কি না।

কারণ, প্রথমত, রাশিয়া চায় না ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ন্যাটোর কোনো সেনা মোতায়েন করা হোক। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। শিগগিরই হবে বলেও মনে হয় না। এরপরও মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, চুক্তির ৯০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে তাঁরা গুছিয়ে এনেছেন। এ বক্তব্যের সঙ্গে মাঠের চিত্র মেলালে সামনে শুধু অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।